
উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে যে কয়েকজন লেখক তাদের রচনায় গাম্ভীর্যপূর্ণ ভাষা এবং বোধের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাসাহিত্যে কালোত্তীর্ন অবস্থান অলঙ্কৃত করেছেন এবং একইসাথে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাসাহিত্য মীর মশাররফ হোসেন তাঁদের অন্যতম। বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের অগ্রগণ্য মীর মশাররফ হোসেন একাধারে ছিলেন নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, সফল আত্মজীবনীকার। তাঁর সাহিত্য জীবনের শুরু উপন্যাস দিয়ে (রত্নবতী, প্রথম প্রকাশ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৯)। পরবর্তী সময়ে তাঁর রচনাভাণ্ডার নানা উপাচারের সমৃদ্ধ হলেও তিনি তাঁর চিন্তাকে আরো বিস্মৃত এবং বিস্মিত করেছেন মরমী সংগীত রচনার মধ্য দিয়ে। তাঁর রচিত গানগুলোয় বাউল ঘরানার ভাব— মূর্ছনা এবং মরমীবাদের নির্জলা ঘোরের জন্ম হয়েছে এ কথা স্বীকার্যের পাশাপাশি এটিও সত্য যে তিনি বাংলাসাহিত্যে এক আলাদা জাদুকরি ভাষা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর সমসাময়িক সময়, যাপিত জীবন এবং তৎকালীন সমাজব্যবস্থার দিকে, ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যায়, তাঁর জন্মের অনেক পূর্বেই অতিবাহিত হয়ে গেছে ওয়াহাবি আন্দোলন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়েছিলো এই আন্দোলনের ঢেউ। তিনি ছেলেবেলায়ই নিজের মত করে বুঝে উঠতে পেয়েছিলেন তাঁর সময় এবং সমাজব্যবস্থায় সাঁওতাল বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহের অসীম শক্তির প্রভাব কতোটা। সরাসরি না হলেও মীর মশাররফ হোসেনের জন্মস্থান কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়ায় এসে পৌঁছেছিল একাধিক কৃষক আন্দোলনের রেশ। তৎকালীন বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার করলে মুখ্য হয়ে ওঠে একপাশে যেমন গড়ে ওঠা মহামেডান লিটারেরি সোসাইটি, ঢাকা মুসলমান সুহৃদ সম্মিলনী, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্যসমিতি আবার অপরপাশে হিন্দুমেলা ও গোরক্ষীণী সভার মতো সভা— সমিতির উত্থানও তৎকালে ছিলো চোখে পড়ার মতো। এ সকল আন্দোলন উভয়ধর্মের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের পার্থক্যকে চিহ্নিত করেছিল বহুভাবে পাশাপাশি তৈরি হয়েছিল দেশের অর্থনীতিতে এক অদ্ভুত রকমের জটিল পরিস্থিতি। গ্রামের প্রাচীন জমিদারতন্ত্রের পাশাপাশি শহুরে আবহেও শুরু হয়ে গিয়েছিলো নব্যধনতন্ত্রের জয়গান। উল্লেখ্য, মীর মশাররফ হোসেনের আবির্ভাবের কিছুকালপূর্বে আবির্ভূত হয়েছিলেন বাংলার কথিত সামন্তযুগের প্রধান সাহিত্যিক— প্রতিনিধি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮—১৮৯৪)। যাঁর উপন্যাস ও অন্যান্য গদ্য রচনায় বাংলার জমিদার শ্রেণির তথা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবন প্রবাহ, চাল—চলন, আচার—আচরণ, সুখ—দুঃখ, প্রেম—বিরহ বিধৃত হয়েছে নির্দণ্ডচিত্তে। ইংরেজী শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত এবং বৃটিশ সরকারে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা থাকাকালীন সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত এই সাহিত্যিক তাঁর রচনায় যে প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা সর্বজনবিদিত। তিনি প্রাচীন ধ্যান—ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সমাজ সংস্কারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সাহিত্য গবেষকদের মতে, সেসময় তিনি নব্য—ভারতীয় সমাজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও দেখেছিলেন এবং সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছিলেন, যার কারণে কোন কোন লেখায় কখনো কখনো কথাশিল্পী বঙ্কিমের অপমৃত্যুও ঘটেছে এক সামন্তবাদী শাষকশ্রেণির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বঙ্কিমের কাছে। এমনি একটা সময়ে সারা উপমহাদেশের মুসলিমজাতি গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত। শিক্ষা—সংস্কৃকিতে তারা পশ্চাৎগামীরূপেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে ততোদিনে। অধিকাংশ সময়েই তারা অবিচার, বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার শিকার; শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য সকল ক্ষেত্রে এদিকে তারা যেমন ছিলো অনগ্রসর, পাশাপাশি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডেও খুব একটা মূল্যায়নযোগ্যতাও তারা খুব একটা অর্জন করতে সমর্ত হয়নি; তেমনি এক বৈষম্যপূর্ণ সময়ে আধুনিক বাংলাসাহিত্যের আকাশে ভোরের উজ্জ্বল শুকতারার মতো আবির্ভাব ঘটে মীর মশাররফ হোসেনের। তাঁর গদ্যরচনার মধ্য দিয়ে বাঙালী মুসলিম সমাজের এবং বাংলাসাহিত্যের উঠোনে জ্বলে ওঠে এক অপরূপ আলো তৎকালীন সময়ে। তাঁর রচনায় তৎকালীন জমিদারি প্রথার শোষণের তীব্রচিত্র উঠে এসেছে। জমিদার শ্রেণির শোষণ ও অসংযমী চরিত্র এবং লোভ—লালসাপূর্ণ স্বভাবের চিত্র প্রতিবিম্বিত হয়েছে। তাঁর রচিত ‘জমিদার দর্পণ’ (প্রথম প্রকাশ—১৮৬৯) নাটক জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে তৎকালে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং পরবর্তীকালে এক ব্যতিক্রমধর্মী বিদ্রোহাত্মক রচনা হিসেবে বিবেচিত। তাঁর রচিত 'গাজী মিয়ার বস্তানী’ (১৮৯৯) তাঁর সমাজ সচেতন লেখার সার্থক পরিচয় বহন করে। তৎকালীন জমিদারদের অত্যাচার, জুলুম, সংযমহীন স্বভাব, আরাম— আয়েশ, অমিতব্যয়িতা ও দুশ্চরিত্রের প্রতিচ্ছবি, সমাজের অসৎ ব্যক্তিদের বিচিত্র ঘরাণার জীবনচিত্র, ক্ষয়িষ্ণু উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনাচারের বাস্তব ছবি সুনিপূণভাবে উঠে এসেছে মীর মশাররফ হোসেন রচিত গ্রন্থে। ইসলাম ধর্মের ইতিহাস থেকে গৃহিত নানাবিধ উপাচারের সাথে আপন চিত্তের মাধুরী মিশিয়ে অভিনব ঘরানার সাহিত্যকর্ম তৈরি করেছেন 'বিষাদসিন্ধু' শিরোনামে। তৎকালীন সময়ের বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে এ এক যুগান্তকারী ঘটনা। এসবের পাশাপাশি তিনি নিভৃতেই এগিযে যাচ্ছিলেন তাঁর গান নিয়ে, ভিতরে ভিতরে অনন্য এক সম্ভবনার আগুন তিনি জ্বালাতে সমর্থ হয়েছিলেন তাঁর গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর গান ছিলো তৎকালে অন্য সবার থেকে আলাদা এক সৃষ্টি, বাংলাসাহিত্য ও সংগীতের জলসাঘরে এ এক অনন্য সংযোজন।
উনিশ শতকের শেষ দিকে সাধকশ্রেণির বাউল সম্প্রদায় ব্যতীতও ‘শখের বাউল' গান রচয়িতাদের আবির্ভাব ঘটে। শখের বাউল কবিরাও ভগবৎ প্রেম ও ভক্তির সংসারের অনিত্যতা প্রভৃতি বিষয়কে আশ্রয় করে তাঁদের মনের অবচেতন অবস্থায়ই তাদের গান রচনা করে আসছিলেন। এইসব গীতিকবিদের গানে সমসাময়িক যুগের বিপন্ন সমাজচিত্র ফুটে উঠেছিলো সেইসময়ে এটি প্রমাণ্য সত্য। এই ‘শখের বাউল’ দল গঠনের ক্ষেত্রে নদীয়া এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলের একদল ছন্নছাড়া মানুষের প্রতক্ষ্য ভুমিকা ছিলো অপরিসীম। এদের মধ্যে কুমারখালির হরিনাথ মজুমদার চিন্তা ও দর্শনে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। হরিনাথ মজুমদার নাম হলেও আত্মশুদ্ধির ফিকির করা এই বাঙালি প্রবাদপুরুষ কাঙাল হরিনাথ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। এছাড়াও তৎকালের পাবনা অঞ্চলে গোলকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ‘ফিকির চাঁদ’ ভণিতায়ই গান লিখেছেন। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, জলধর সেন, দীনেশ কুমার রায় প্রমুখের সাথেও মীর মশাররফ হোসেন কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের সাহিত্য পাঠশালার শিষ্য ছিলেন। কাঙাল হরিনাথ ১৮৮০ সালে ‘ফকির চাঁদ বাউলের দল' নামে গানের দল গঠন করেন। অবশ্য তৎকালীন সময়েই মীর মশাররফ হোসেন এর সাহিত্যগুরু হিসেবে 'গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' (প্রথম প্রকাশ—১৮৬৩) পত্রিকার সম্পাদক এই কাঙাল হরিনাথের অবদান অনেক। সে সময়ে মীর মশাররফ হোসেন ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ করতেন, তবে গোপনে! এই বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন-
‘কলিকাতার সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক শ্রীযুক্ত বাবু রামচন্দ্র গুপ্ত। সহকারী ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কনিষ্ঠ ভ্রাতা, সহকারী সম্পাদক ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সহিত পত্রে পত্রে দেখাশুনা যেরূপ হইতে পারে তাহা আছে। আমি অনেক সংবাদ তাঁহাদের কাগজে লিখিতাম। তাঁহারাও দয়া করে ছাপাইতেন। আমাকে নির্দিষ্ট করিয়াছিলেন— “আমাদের কুষ্টিয়ার সংবাদদাতা”। কেউ জানিত না যে আমি প্রভাকর পত্রিকায় কুষ্টিয়ার সংবাদদাতা, সাদাসিদেভাবে সংবাদ লিখিতাম। ভুবনবাবু কাটিয়া ছাটিয়া প্রকাশের উপযুক্ত করিয়া দিতেন। কোন কোন সংবাদ বাদও দিতেন। সংবাদ সংগ্রহ করিয়া লিখিয়া পাঠাইতাম। কুমারখালীতে সে সময়ে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশ হইত। কুমারখালী, আমার বাটী হইতে নিকটে। গ্রামবার্তার সম্পাদক বাবু হরিনাথ মজুমদার মহাশয় আমাকে কনিষ্ঠ ভ্রাতার ন্যায় স্নেহ করিতেন। আমিও তাহাকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার ন্যায় মান্য করিতাম। সপ্তাহে সপ্তাহে গ্রামবার্তায় সংবাদ লিখিতাম, প্রভাকরেও লিখিতাম। মক্তারপুর বসিয়া বসিয়া থাকি কোন কাজকর্ম নাই। সংবাদ সংগ্রহ করিয়া নিয়মিতরূপে লিখিতে আরম্ভ করিলাম। হরিনাথবাবু কপতক্ষ নদীর অবস্থা লিখিতে পত্র লিখিলেন, এক একদিন বহুদূর নৌকা করিয়া আসিয়া লিখিতাম। তিনি কাটিয়া ছাঁটিয়া কাগজে প্রকাশ করিতেন। এদিকে হরিনাথবাবু আর কলিকাতার দিকে ভুবনবাবু আমার সামান্য লিখা সংশোধন করিয়া প্রভাকরে প্রকাশ করা আরম্ভ করিলেন’১
মীর মশাররফের সাহিত্য—সাধনার সূচনাকালে সংবাদ কিংবা প্রতিদেন জাতীয় রচনার পাশাপাশি বেশকিছু প্রবন্ধ ও কবিতা উক্ত পত্রিকা দুটিতে প্রকাশ হয়। সেকালের মুসলমান সমাজের বিবাহের বিভিন্ন রকমের দোষ—ত্রুটির সমালোচনা করেও মীর মশাররফ হোসেন 'মুসলমানের বিবাহ পদ্ধতি' এবং ‘গোলাপ’ শিরোনামে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন যা সংবাদ প্রভাকর' এ যথাক্রমে (১২৭২ বঙ্গাব্দ) এবং (মে,১৮৬৫ খ্রী.) এ প্রকাশিত হয়। এই প্রকাশিত লেখা দুটি সেসময়েই বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছিলো। এমনই এক সময়ের কোন একদিনে কাঙাল হরিনাথের অনুরোধে মীর মশাররফ হোসেন কাঙ্গাল হরিনাথের দল ফিকিরচাঁদের দল' নামে বাউল গানের দলের জন্যে সুরে সুরে কথা বসিয়ে গান রচনা করেন। এই গান রচনার পেছনে যথেষ্ট উৎসাহ যুগিয়েছিলেন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার স্বয়ং। ভূবন মুখোপাধ্যায় এবং কাঙাল হরিনাথ মজুমদার উভয়েই ছিলেন মশাররফের রচনার প্রথম সমালোচক। তাঁরা কেবল তাঁর রচনার সংশোধনই করেননি সেইসাথে প্রকাশভঙ্গির উন্নতিসাধনেও বেশ তৎপর ছিলেন পত্রিকায়। ইংরেজি ১৮৬৫ সালে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র সম্পাদক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেনের সাক্ষাত হয়। একই সময়েই সরাসরি পরিচয় হয় সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার সহকারি সম্পাদক ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। এর পূর্বের দুইবছর চিরম বিপর্যয়ে কেটেছে মীর মশাররফ হোসেনের জীবন। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা। বস্তুত কাঙাল হরিনাথ ও ভুবনচন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁকে তাঁর জীবনে এক নতুন পথের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, তাঁকে সন্ধান এনে দেয় আরো নতুন কিছু করার, নতুন আলো জ্বালাবার।মীর মশাররফের বয়স সেসময় ১৮ পেরিয়েছে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি কাঙাল হরিনাথের আবেদনে সাড়া দিয়ে গ্রামবার্তা—র জন্য বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবেদন লেখা শুরু করলেন। ‘গৌরীতটবাসী মশা’ ছদ্মনামে সেগুলো প্রকাশও হতে থাকে। পরবর্তীতে তাঁর রচিত বাউলগানগুলোর ভণিতায়ও তিনি নিজেকে ‘মশা’ নামেই উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য ইতোমধ্যেই তৎকালে বাউল গানের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন কাঙাল হরিনাথ। বাউল শিরোমণি ফকির লালন সাঁই বহুবার এসেছেন কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের স্বনামে খ্যাত ‘কাঙাল কুটিরে’। মীর মশাররফ হোসেনের নিত্যদিনের কার্যই ছিলো কাঙাল কুটিতে সময় অতিবাহিত করা। এমনই একসময় কাঙাল হরিনাথ তাঁকে এক অদ্ভুত অনুরোধ করে বসেন হঠাৎ। তিনি মীর মশাররফকে বললেন তাঁর সেই গানের দলে যুক্ত হতে। এই প্রস্তাবে মীর মশাররফ হোসেন প্রথমে খানিক আপত্তি জানালেও পরবর্তীতে সেই দলের একজন হয়ে তিনি দলে জন্য গান রচনা করেন। স্ব—প্রতিভার গুণেই মীর মশাররফ গান লিখতেন, কিন্তু গান গাওয়ার বিষয়ে তিনি ছিলেন একেবারেই অজ্ঞ। তাঁর কণ্ঠে গান একেবারেই আসেনি কখনোই। মীর মশাররফ হোসেনের এই বাউলদলের একজন সদস্য হয়ে ওঠা নিয়েও রয়েছে কাহিনি। একদিন কুমারখালিতে কাঙাল কুটিরে হঠাৎ—ই উপস্থিত মীর মশাররফ হোসেন। তিনি অনুরোধ জানালেন পুরো ফিকির চাঁদের দলকে তাঁর বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণের। এই প্রসঙ্গে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার এর প্রথম জীবনীকার জলধর সেন এর বয়ানের কাছে ফিরে যেতে হয়, কেননা তাঁর বয়ানই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে উক্ত বিবরণের-
‘আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, সেই সময়ে একদিন মীর মশারফ হোসেন কুমারখালীতে কাঙ্গালের কুটীরে উপস্থিত হইলেন এবং ফিকিরচাঁদের দলকে, তাঁহার বাড়ীতে লইয়া যাইবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিলেন। কাঙ্গাল সম্মত হইলেন। তিনি বলিলেন, “দলের নিয়মানুসারে দলের লোকেরা তোমার বাড়ীতে আতিথ্য গ্রহণ করিবেন না। তোমার বাড়ীতে গান শেষ করিয়া দলের লোকেরা সেই রাত্রিতেই বাড়ী ফিরিয়া আসিবেন; তোমার বাড়ীতে তাঁহারা এক ছিলিম তামাকও খাইবেন না।” মশারফ বলিলেন “সে কি রকম কথা! তা কি হয়?” কাঙ্গাল বলিলেন “তবে তুমি যদি এই দলভুক্ত হও, তবে তাঁহারা তোমার বাড়ীতে আতিথ্য গ্রহণ করিতে পারেন।” মশারফ হাসিয়া বলিলেন “আমি ত গান করিতে জানি না।” কাঙ্গাল উত্তর করিলেন “গান করিতে জান না বটে, কিন্তু গান ত লিখিতে জান।” মীর মশারফ বলিলেন “তাহা হইলে আমি দলভুক্ত হইলাম। এখনই গান লিখিয়া দিয়া যাইতেছি।”এই বলিয়া তিনি তখনই গান লিখিতে বসিলেন। আমরা সেই গানটী উদ্ধত করিলাম; মীর সাহেব এই দলের জন্য আর কোন গান পরে দেন নাই। গানটী এই-
রবে না দিন চিরদিন, সুদিন কুদিন,
একদিন দিনের সন্ধ্যা হবে।
এই যে আমার আমার, সব ফক্কিকার,
কেবল তোমার নামটী রবে;
হবে সব লীলা সাঙ্গ, সোণার অঙ্গ
ধূলায় গড়াগড়ি যাবে।
সংসারের মিছে বাজী, ভোজের বাজি,
সব কারসাজি ফুরাইবে;
তখন রে এক পলকে, তিন ঝলকে,
সকল আশা ঘুচে যাবে।২
এই কথার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় মীর মশাররফ কেবলই ফিকিরচাঁদের দল-এর জন্যই গান লেখেননি বরং তিান গান লিখেছেন আপন আত্মার তাগিদে, তবে, শুরুটা কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের কথাতেই। কতগুলো গান তিনি রচনা করেছিলেন? তাঁর গানেগুলো থেকে বিভিন্ন মেজাজের এবং ঢঙের ৯১টি গান সংকলিত হয়েছে ‘সঙ্গীত লহরী’র প্রথমখণ্ডে (কুষ্টিয়া লাহিনীপাড়া হইতে আইনদ্দিন বিশ্বাস দ্বারা প্রকাশিত এবং ৪৬ নং পঞ্চাননতলা, কলিকাতা ভারতমিহির যন্ত্রে শ্রীযাদব লাহিড়ী কর্তৃক মুদ্রিত)৩।
মীর মশাররফ হোসেন এর বাউলগান রচনায় নেপথ্য অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করেছেন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার এ কথা সত্য। মীর রচিত বাউল গানগুলোয় কাঙাল হরিনাথের ভাবনা—প্রভাবই বেশি আরোপিত হলেও তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন নিজস্ব গীতভাষা। অনেকেই মন্তব্য করেছেন ‘লালন সাঁইজির গানের প্রভাব মীরের গানে হয়ত এসে থাকতে পারে’।এই মন্তব্য গুরুত্ব্পূর্ণ কতোটুকু সে আলোচনা বর্তমানে অপ্রাসংঙ্গিক, তবে মীর মশাররফ হোসেন এর সাথে লালন সাঁইজির একাধিকবার দেখা হয়েছিলো এমন তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন গবেষকের কলম থেকেই। আবার, এই কথা অবশ্যই তৎকালীন ইতিহাস প্রমাণ করে যে কাঙাল হরিনাথের জীবনচেতনাও বরাবর এক তালে চলেনি, ফকির লালন সাঁই এসে তাঁর বোধিসত্ত্বায় ভয়ানকভাবে নাড়া দিয়ে গেছেন। মীর মশাররফ হোসেন উভয়েরই সুহৃদ ছিলেন। তৎকালীন পরিবেশ ও সময় মীরের সাহিত্য ও সঙ্গীত সাধনার অনুকুলে ছিল যে কারণেই তাঁর পক্ষে বাউলকবি হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। একটি বিষয অনস্বীকার্য যে, লালন, কাঙাল হরিনাথ ও পাগলা কানাই—এর মত প্রতিভাবানদের পরিবেষ্টিত আবহ—ই মীর মশাররফ হোসেনকে বাউলগান রচনায় উৎসাহিত করেছে। মীর মশারফ হোসেনের বাউল গানে লালন, কাঙাল হরিনাথ ও পাগলা কানাই—এর মত কোন নিগূঢ়তত্ত্বের প্রকাশ ঘটেনি, এর কারণ হতে পারে তিনি প্রথাগত বাউল কিংবা সাধক ছিলেন না। তাঁর বৈষয়িক জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তাঁর দর্শন গানের কথার মাধ্যমে চমৎকার ভাবে ফুটে উঠেছে। কখনো বিষণ্ণতা, কখনো বিরহ, কখনো হাহাকার, কখনো এই অনিন্দ্য সংসার থেকে বন্ধন মুক্তির চেষ্টা, আবার কখনো ষড়রিপুর ফাঁদে পড়ে বিপথে যাওয়ার উন্মাদনা, যা মানুষকে শেষব্দি কিছুই দিতে পারেনা- এই জাতের বিষয়গুলিই তাঁর গানে প্রাধান্য পেয়েছে। সঙ্গীত লহরীর প্রথম খণ্ডে প্রকাশিত মোট গানের সংখ্যা ৯১টি। এই সঙ্গীত লহরীর প্রথম খণ্ডের গানের মধ্যে প্রেম—বিরহজাত গানের সংখ্যা সবমিলিয়ে ৬৪। এ গানগুলোর পাশাপাশি মরমি বাউল গান রয়েছে বেশকিছু। একটি পদ এরকম-
মান ত্যাজ মানিনী লো যামিনী যে যায়
অপরাধ ক্ষমা কর ধরি এই পায়
কি দোষে হয়েছি দোষী,
বল না লো ও রূপসী,
বিনা দোষে গলে ফাঁসি
দেওয়া উচিত নয \
যা তুমি শুনেছ কানে,
বলব কি আর ধম্মর্ জানে,
আছে ঠিক মনে মনে, তোমারই কথায় \
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় ‘টপ্পাগান’ প্রবর্তন করলেন রামনিধি গুপ্ত বা নিধু বাবু (১৭৪১ - ১৮৩৯)। বলা যায়, এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাগানের প্রাক—আধুনিক যুগের শুভ সূচনা হলো। সঙ্গীতশাস্ত্রবিদগণের মতে, টপ্পা গানের উৎপত্তি পাঞ্জাবে তবে, ‘নিধুবাবু’ নামেই অধিক পরিচিত রামনিধি গুপ্ত এই বাংলায় টপ্পা গানের সূচনা করেন। ধীরে ধীরে এই কাব্যছন্দাশ্রিত ‘টপ্পাগান’ হয়ে ওঠে বাংলা কাব্যসঙ্গীতের অন্যতম পথ—প্রদর্শক। হিন্দি টপ্পাগানের জনক শোরী মিঞা, যিনি উটচালকদের সুরের ছন্দ থেকে টপ্পার তান ও শৈলী উদ্ভাবন করেন। উল্লেখ্য, শোরী মিঞার কাব্যের ভাবরস নিধুবাবু ব্যবহার করেননি। তার টপ্পাগান ছিল বাঙালিয়ানার বিভিন্ন উপাচারে পরিপূর্ণ আবার, বাংলাভাষায় টপ্পাগানের আরেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব কালী মির্জা (১৭৫০—১৮২০), যিনি একাধারে টপ্পাগানের রচয়িতা ও গায়ক। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়া গ্রামে। প্রকৃত নাম কালীদাস মুখোপাধ্যায়। কিন্তু দিল্লী এবং লক্ষ্ণৌতে ফারসি ও উর্দু ভাষায় শিক্ষালাভ, শাস্ত্রীয়গানে তালিম গ্রহণ এবং মুসলমানের মতো বেশভূষা পরিধান ও আচরণ পালনের জন্য তিনি মীর্জা নামে পরিচিতি লাভ করেন। কালী মির্জা সংস্কৃত ভাষায় হিন্দুশাস্ত্র ও সঙ্গীতবিদ্যায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। সেকালের কবিওয়ালাদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী। তিনি কিছুকাল বর্ধমানের মহারাজা প্রতাপচন্দ্রের সভাগায়ক ছিলেন। কথিত রয়েছে যে, রাজা রামমোহন রায়কে তিনি সঙ্গীত শিক্ষা দিয়েছিলেন। সে সময়ে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছিলো বাংলার বাউলদের গান। এই কথা স্বীকার্য বাংলাসংগীত ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য বাউলের একতারাকে বাদ দিয়ে অসম্পূর্ণ।লৌকিক বাংলার লোকসংস্কৃতির ধারায় বাউল সম্প্রদায় পুষ্ট হয়েছে তাদের সাধনসংগীত ও ব্রতচারীতার মধ্য দিয়ে। এই লোকায়ত বাউল গান আমাদের মানব জীবনের এক অপূর্ব ভাব— মানসের গুরুত্বপূর্ণ আকর হিসেবে পরিচিত। অন্য কোন সঙ্গীতশাখা এমনভাবে আমাদেও অন্তরাত্মাকে জাগ্রত করতে পারেনি। বাঙালীর প্রাণে—মননে বাংলার বাউলগান আশ্চর্যজনক ভাবে সঞ্চরণশীল। গৌড়াঙ্গ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের মৃত্যুর পর অর্থাৎ বৈষ্ণবধর্ম পরবর্তী সময়ে ঐ ধর্মের লোক—মানসের ওপর বাউল সম্প্রদায়ের লৌকিক পরিচিতি এবং সাধনমার্গ এক রকম উচ্চতর মাত্রার প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ধারণা করা হয় চৈতন্যদেবের আবির্ভাব না ঘটলে হয়তো বাঙালীর জীবন, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অধ্যায়টি আরো অন্যভাবে পাওয়া যেত। তাঁর সৃষ্ট প্রেম—ধর্মের অনুগমন তৎকালীন বাংলা ভাষাভাষীর জীবন এবং সং¯কৃতির প্রবাহকে বিস্ময়াতীতভাবেই পরিবর্তিত করেছিল। চৈতন্য দেবের পরে এই ধর্মমত সমর্থিত সম্প্রদায়ের রচিত বাউল গান বাংলার জনমানসে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। বিশেষ করে বৃহত্তর পাবনা—কুষ্টিয়া অঞ্চলে। এই পাবনা—কুষ্টিয়া ছিল বাউল প্রভাবিত এলাকা। চৈতন্য—পরবর্তী এই অঞ্চলের সংস্কৃতির ভাব—অভাব, লোকজ্ঞান সবকিছুই চৈতন্যদেবেরই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রভাবজাত এবং এই প্রভাব থেকে বাংলার বাউলরা কখনোই মুক্ত হতে পারেননি তাঁর ছাপ স্বয়ং লালন সাঁই বহন করেছিলেন অবচেতনেই তাঁর পুরো জীবনে। তাঁর সময়ের বেশ কিছুকাল পরে কাঙাল হরিনাথ এবং মীর মশাররফ হোসেন তাঁদের গানকে কিছুটা হলেও চৈতন্য—বলয়ের বাইরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাঙালী জাতিসত্তার এই অবিচ্ছেদ্য অংশ অর্থাৎ বাউলগান অনেকের মতোই স্পর্শ করেছিল মীর মশাররফ হোসেনের হৃদয় আঙিনা। মানবজীবনের সাথে এই বাউলগানের যে গভরি সম্পর্ক সেটি মীর মশাররফ হোসেন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন এবং তা অত্যন্ত সহজ সরলরূপে, প্রবল আসক্তিতে নয়। বাউলগণ মুক্ত, বন্ধনহীন জীবনাচারের মূর্ত প্রতীক। জাত বিচারের তুচ্ছতা কখনোই এদের স্পর্শ করতে পারেনি। প্রকৃত বাউল মাত্রেই মানবতাবাদী। হিন্দু, মুসলমান উভয় ধর্মের লোকই বাউল সম্প্রদায়কে করেছে মহান, উদার। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিধৌত বাংলার মাটিতে সংসার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, চলমান একটি সঙ্গীত সম্প্রদায় এই বাউলগোষ্ঠী। বৈষ্ণব ধর্মের পরে এই র্ধমমত সমথির্ত সম্প্রদায়ের মতবাদ ও তাদের রচিত এবং গীত বাউলগান লোকজ বাংলার জনমানসে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। মীর মশাররফ হোসেনের বাউল গানগুলোয় 'মশা' ভণিতার উল্লেখ রয়েছে। তাঁর সঙ্গীতাগ্রহ এবং রসবোধের পরিচয় তাঁর জীবনাচরেই পাওয়া যায়। একসময় গান—বাজনা তাঁর প্রিয় ছিল; বোধকরি বিষয়টি তাঁর শৈশবেই পদমদীর নবাব বাড়ি থেকে প্রাপ্ত। মীরের জীবনের নানামুখী অভিজ্ঞতা এবং নানাবিধ ঘটনা তাঁকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং সংগীতমানসসত্ত্বা তৈরিতে সাহায্য করেছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাঁর দ্বিতীয় পত্নী কুলসুম সংগীতপ্রিয় ছিলেন। তিনি গ্রামোফোনে গান শুনতে ভালোবাসতেন। গান রচনার ক্ষেত্রে বিবি কুলসুমের অনুপ্রেরণা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো বলে মনে করা অবান্তর নয় একেবারেই। পাশাপাশি কাঙাল হরিনাথের প্রেরণায় মীর মশাররফ হোসেন বাউল গান রচনায় গভীর মনোনিবেশ করেছিলেন এ কথাও সত্য অর্থাৎ তাঁদের দু’জনেরই অবদান অনস্বীকার্য। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন বাউল শিরোমনি ফকির লালন সাঁইজির অকৃত্রিম বন্ধু। কুমারখালির নিকটবর্তী ছয় সাত মাইল দূরে কালীগঙ্গা নদীর তীরে ছেঁউরিয়ায় আখড়া করেছিলেন ফকির লালন সাঁই। লালন-কাঙালের সম্পর্ক ছিল মধুর। সেই সময় একই অঞ্চলের আরেক বাউল পাগলা কানাই তাঁর আবেগময়, উদাত্ত কণ্ঠে গান গেয়ে নদীয়া ও তার আশপাশের অঞ্চল প্লাবিত করে বেড়াচ্ছিলেন। এই সব পরিবেশের মধ্যে বাস করে মীর মশাররফ হোসেনের মনেও বাউল গানের ভাব উদয় হয়েছিলো এই মন্তব্য বাহুল্য নয়। মীর মশাররফ হোসেন মাঝেমাঝেই ফিকিরচাঁদের দলের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণে যোগ দিতেন। কাঙাল হরিনাথ একদিন ফিকিরচাঁদে'র দল নিয়ে কুমারখালির সাঁওতা গ্রামে গেলে সেখানে লালন সাঁইজির সাথে হঠাৎ করেই কাঙালের দেখা হয়ে যায়, তখন মীর মশাররফ হোসেনও কাঙালের সঙ্গেই ছিলেন। জনশ্রম্নতি আছে, লালন এবং কাঙাল সেদিন উভয়েই গান গেয়েছিলেন। এসবের পরেও মীর মশাররফ হোসেন তাঁর সংগীত ও সাহিত্যচেতনাকে খুব বেশি একপেশে করে ফেলেননি কখনোই। গানের ক্ষেত্রে তিনি সবসময়ই তাঁর লেখায় অন্যদের থেকে একটু বেশি সরেস থেকেছেন এমন প্রমাণ হামেশাই চোখে পড়ে তাঁর ‘সঙ্গীত লহরী’র দিকে দৃষ্টি ফেরালে। বাউল মরমবিাদকে তিনি স্পর্শ করেছেন তাঁর নিজের মতো করে। তাঁর ‘সঙ্গীত লহরী’র গানগুলোয় কখনো মনে হয়েছে তিনি একেবারেই ডুবে গেছেন মরমিবাদের চরম উচ্চমার্গে আবার কখনো বা নিজেকে সাধারণ থেকে অতি সাধারণ স্তরে নামিয়েছেন যেমনটি করেছেন তার পূর্বসুরী বাউল—সাধকগণ। অধিকাংশ পদের ক্ষেত্রেই তাঁর ভাবনাকে খুব সহজ মনে হয়-
মিছে ভাই জাতির বিচার, আচার ব্যাভার,
মিছে রে এই দুনিয়াদারী।
১। দিন কয়েকের জন্য
কেন কর এত বুঝতে নারি।
তাঁর কাছে নাহি ভিন্ন, কেহ অন্য,
সকলই তাঁর কারিগরী \
২। দেখ কৃষ্ণ, বিষ্ণু, মুসা, ইসা,
নানক, নিতাই জটাধারী।
অরে ভাই অন্নপূর্ণা, বিবি ফাতেমা,
মোহাম্মদ পয়দা তাঁরি \
৩। অরে নাই ভেদাভেদ, বর্ণ বিভেদ,
কিছু প্রভেদ, কাছে তাঁরি।
মশা কয়, ধোকায় পড়ে বোকা হয়ে,
করি আমরা মারামারি \
৪। আখেরে কিছু রবে না, হবে ফানা,
‘আখের ফানা’ মনে করি ।
এস ভাই সবাই মিলে, দেল খুলে,
দেলের ম’লা দূর করি \
মীর মশাররফ হোসেন গানের ভিতরে অনন্য সাধারণ ভাবনৈপুন্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেরননি বরং তিনি তাঁর আত্মমগ্নতাকে সুলোলিত মাত্রায় প্রকাশিত করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর উন্মাদনাই গানের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। মীর মশাররফ হোসেনের গানের আবেদন বৈঠকী ঘরানার। 'বেঙ্গল পাই ক্যাটালগ'র প্রতিবেদনের (প্রকাশ—১৮৮৭) পৃষ্ঠা—৪—এ পণ্ডিত মহামোহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘সঙ্গীত লহরী’ সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন:
Whatever Mir Masharruf writes deserves attention... the collection of his short poetical pieces may be ranked in point of style and language with those of the best Bengali poets of the day.3
তাঁর এই মন্তব্য যথার্থই। উনিশ শতকের সেই সময়ে মীর মশাররফ হোসেন শুধুই কি তাঁর আত্ম যন্ত্রণাকেই লিপিবদ্ধ করেছেন বিভিন্ন লেখায়? কেবলমাত্র গানগুলো ছাড়া! এই কারণেই অন্য সব গদ্য রচনায় মশাররফ যে আবহ তৈরি করেছেন সেই আবহ তাঁর গানে খুঁজে পাওয়া যায়না, হয়তো এজন্যই দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর প্রায়—অন্তরালে রয়ে গিয়েছিলো তাঁর অসম্ভব মূর্ছনা জড়ানো এই গানগুলোর সত্যিকারের মূল্যায়ন। তাঁর গানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য সময়কে উতরে যাওয়া। তাঁরই সময়ে যারা সমাদৃত ছিলেন গান নিয়ে তাঁদের কারো পথেই তিনি হাঁটেননি বরং চুপ করে লিখে গেছেন আপন উদাসী চেতনায়। সমকালীন সঙ্গীতবিশারদদের সাথে বেশরকম তফাৎ লক্ষ্য করা যায় মীর মশাররফ হোসেন এর। এ কথা অবশ্যই শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার্য যে, মীর মশাররফ হোসেন প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক। তিনি প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন "রত্নাবতী" (১৮৭৩) উপন্যাস রচনা করে। তিনিই প্রথম মুসলিম নাট্যকার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন 'জমিদার দর্পণ' (১৮৬৯) নাটক রচনার মাধ্যমে। দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণের চেয়েও এটি অধিক শক্তিশালী গণমুখী চেতনায় সমৃদ্ধ নাট্য কর্ম। সবচেয়ে গৌরবজনক ব্যাপার হচ্ছে মীর মশাররফ হোসেনই তৎকালীন সময়ের বিবেচনায় মুসলিম সাংবাদিকতার জনক। তিনিই প্রথম মুসলিম সাহিত্য সাধক যিনি পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে 'আজিজন নেহার' ও হিতকরী (১৮৯০) পত্রিকা সম্পাদনা করে ভবিষ্যৎকালের সাংবাদিকদের নিকট প্রাতঃস্মরণীয়। ১৮৬৫ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫ বছর তাঁর শিল্প—সাহিত্য সৃষ্টির সময়কাল। ব্যক্তি মানসের এই বিরল আত্মপলব্ধি, তাঁর সময়ের যুগের আগে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই আত্মপলব্ধি একেবারেই আধুনিকতাপূর্ণ ছিলো তাঁর। মধ্যযুগের সাহিত্যে এমনটা কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। এই আত্মপলব্ধি থেকেই তিনি রচনা করেছিলেন দুটি আত্মজীবনীমূলক রচনা। শেষ জীবনে মীর মশাররফ তাঁর নিজ ধর্মের বিভিন্ন উপাচার নিয়েও লিখেছেন। সাধারণ দৃষ্টি তে এই সৃষ্টি প্রথাবদ্ধ মনে হলেও বাংলা আখ্যানকাব্যের ধারায় রচিত এই রচনাবলী অদ্যাবধি পাঠকদের বিশেষত সাধারণ মুসলমান পাঠকদের চিন্তার জোগান দিয়েছেন; মীর মশাররফ হোসেনের এইধরণের রচনার সার্থকতা সেখানেই। উনিশ শতকে বাঙালী মুসলমানের মাতৃভাষা নিয়েও বিতর্ক চলেছে অনেকটা কাল অব্দি। এরকম পরিস্থিতিতে মীর সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন। বলা চলে, তিনি অমসৃণ, দুঃখ—দুর্দশাক্লিষ্ট জীবনই যাপন করে গেছেন সারাজীবন। সাহিত্যর্চচায় আসার পূর্বেই সেই সময়ের সাহিত্য সম্পর্কে প্রথম থেকেই মনোভাব ছিল স্পষ্ট অর্থাৎ তিনি জেনে বুঝেই সাহিত্যচর্চায় এসেছিলেন নিরঙ্কুশ সাহসের সাথেই এবং নির্দ্বিধায় বাংলা ভাষাকেই তাঁর সাহিত্যভাষা হিসেবে গ্রহণ এবং হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন, পাশাপাশি এই বাংলা ভাষা—বিরোধীদের তিনি কঠোর ভাষায় সমালোচনা করতে কখনোই পিছপা হননি। বাংলা ভাষায় তাঁর দখল ছিলো অসামান্য। একটি বিষয় এখানে উল্লেখ জরুরি- একদিকে মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন তাঁর সমকালে রেনেসাঁসেরই সৃষ্ট মানুষ এবং এই রেনেসাঁসের প্রতি দুর্বলতা ও দ্বিধা রয়ে গিয়েছিলো আজীবন, অপরদিকে তৎকালে উত্থান দেখা দিয়েছিল মানবতাবিমুখ সমাজব্যবস্থার, যে কারণেই সংগীত রচনার পূর্ব সময় পর্যন্ত তিনি ছিলেন ধর্মগ্রন্থের ভাষার সীমায় আবদ্ধ এবং তাঁর ছাপ স্পষ্টই রয়ে গেছে তাঁর বিভিন্ন রচনায়। গান রচনার মসময় তিনি সহসাই ঢুকে পড়তে পারতেন এক অসম্ভব উন্মুল বোধের গভীরে! সঙ্গীত লহরী’র ৭৮ নম্বর গানে-
মনে কি আছে রে মন, হবে কেমন,
যেদিন হতে হবে পার।
১। সে যে অকূল পাথার, নাই পারাবার,
সাধ্য বা কার, হয় রে পার ।
বিনে তার কৃপা তরী, সুকাণ্ডারী,
নিয়োজিত কর্ণধার \
২।সে ঘাটের তুফান ভারী, ভাঙ্গবে তরী,
খাটবে না আর জারি কার ।
কত জাহাজ বজরা যাবে মারা,
সারা হবে চড়নদার \
৩।কেউ খাবি খাবে, ডুবে যাবে,
পারবে নারে যেতে আর ।
কেউ আবার, হেলা করে,
ভেলায় চড়ে হবে পার সেই সাগর \
৪। মশার প্রাণ উড়ে যায়, ঐ ভাবনায়,
কি হবে হায় উপায় এর ।
ওরে ভাই সেই দয়াময়, সব্বর্বিজয়
বিনে নাহি ভরসা আর \
মীর মশাররফের সাহিত্যজীবন এই দুইটি ধারার মধ্যে দোদুল্যমান সর্বদাই, আবার এমন নয় যে, তিনি প্রথমধারা থেকে দ্বিতীয় ধারায় স্বেচ্ছায় এসেছেন। বলা যায়, তিনি 'রত্নবতী', 'বসন্তকুমারী নাটক’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘এর উপায় কি?’ সহ সমস্ত গদ্য রচনাতেই যদিও কখনো কখনো ধর্মীয় কাহিনী নিয়েছেন তবে সবথেকে মনযোগী হয়েছিলেন কাহিনীরস উপস্থাপনের দিকে। সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যের গোড়ায় সেঁধিয়ে জমিদারী প্রথার দুঃশাষণ নিয়ে লিখেছেন জমীদার দর্পণ এর মতো অসামান্য রচনা। এর পরবর্তীতেই তৎকালীন সমাজব্যবস্থার মুখোশ উন্মোচন করে লেখনীতে ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্যঙ্গ বিদ্রুপের আশ্রয়ে রচনা করেন ‘গাজীমিয়াঁর বস্তানী’। এই রচনার আগেই তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘গো—জীবন’ প্রকাশিত হয়েছে। এ সব রচনার মূলেই ছিলো মানবতাবাদ। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, মীর মশাররফ হোসেন সঙ্গীত রচয়িতারূপে আবির্ভাবকালের পূর্বে একবারেই অন্য মানুষ ছিলেন, তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর সঙ্গতি—লহরীতে চোখ রাখলেই। তিনি তাঁর সমকালীন জীবনের বিপ্লবী চেতনা বা রেনেসাঁসের প্রখর প্রভাবের দ্বারা প্রভাবিত হননি এই কথা নির্জলা সত্য। রেনেসাঁস দ্বারা প্রভাবিত হলে তিনি সহজ এবং নির্জলাভাবে সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় বিচরণ করতে পারলেও এই ধরণের গান রচনা করতে পারতেন না এবং এভাবে তাঁর লেখায় অতীত ঐতিহ্যের বর্ণনা উঠে আসতো না কখনোই। তিনি তথাকথিত সভ্যতায় ইচ্ছে করলেই গা ভাসাতে পারতেন কিন্তু তিনি সেই পথেই হাঁটেননি এই মন্তব্য জোর দিয়েই করা যায় তাঁর সঙ্গীত লহরী পাঠ বিবেচনা থেকে। এই সঙ্গীত লহরীতে ১৫টি গান রয়েছে বাউলাঙ্গীন রূপ—রস। এখানেই শেষ নয় তিনি রাগিণীপ্রধাণ সঙ্গীত রচনা করেছেন। সঙ্গীত লহরী’তে সূচিবদ্ধ প্রথম গানেই দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে-
।।রাগিণী—বসন্তবাহার; তাল—আড়া।।
ফুটিল বসন্ত ফুল, মোহন কাননে। (সই!)
দহিছে বিরহীর প্রাণ, বিচ্ছেদ দহনে \
পিকবঁধু শাখী পরে,
কুহরে পঞ্চম স্বরে,
শুনে প্রাণ হু হু করে,
বিয়োগী মরে জীবনে\
ফুল শরে ফুল বাণ,
হানিতেছে পঞ্চবাণ,
ঋতুরাজ বধে প্রাণ,
প্রমোদিত উপবনে\
এ বসন্তে কান্তা হারা,
আঁখি ঝরে তারা কারা,
কোথারে নয়ন তারা,
সতত বলে বদনে\
মীর মশাররফ হোসেনের গানের ঢঙ একেবারেই ভিন্ন। তিনি গান লিখেছেন, তাঁর ভাবনা কেবলই যে বাউলঘরানাকে অনুসরণ করেছে এমন নয়। তিনি গান লিখেছেন তৎকালে প্রচলিত আঙ্গিক থেকেও ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্নস্বরে। কখনো তাঁর লেখা গানে মনে হয়েছে একেবারেই গুরুগম্ভীরভাবকে আশ্রয় করে তিনি লিখেছেন আবার কখনোবা একেবারেই অন্য অচেনা ভঙ্গিমায়। একটি বিষয় তাঁর আত্মজীবনী পড়ে উপলব্ধি করা যায়, তিনি অনন্যোপায় হয়েই তার জীবনযাপনের এক নিরবিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবেই নিয়েছিলেন সাহিত্য রচনার বিষয়টি। তিনি যাপিত জীবনের কোথাও শান্তি খুঁজে পাননি সেটি তাঁর 'আমার জীবনী' এবং 'অপ্রকাশিত ডায়েরী' (আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত) পড়ে দিব্যি মন্তব্য করা যায়। এই অপ্রাপ্তির আক্ষেপ থেকেই তাঁর অন্যান্য বিষয়গুলো রচিত হলেও গানের বিষয়ে তিনি অন্য ধ্যান ধারণা পোষণ করতেন এই মন্তব্য সহজেই করা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ধারণাটি কি? জীবনের সুক্ষ্মতম বোধ থেকেই তিনি বাউল গানগুলো লিখেছেন। বাকি ঘরানার গানগুলো একেবারেই সঙ্গীত—ব্যাকরণ মেনে লেখা এমনটা বলা যায় না তবে প্রতিটি গীতশীর্ষে রয়েছে নির্দৃষ্ট রাগিণীর উল্লেখ। সঙ্গীতের রাগ—রাগিণী সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান তাঁকে এই রচনার পথে ধাবিত করেছে এই মন্তব্য করা একেবারেই সহজসাধ্য। তাঁর গান রচনার পাশাপাশি পদশীর্ষে উল্লিখিত রাগিণী'র নাম গানগুলোর ভাব—তাৎপর্যতা প্রমাণ করে যা কোনভাবেই সেই সময়ের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞের চেয়ে কোন অংশেই কম ছিলো না। উনিশ শতকের শাস্ত্রীয়—সঙ্গীতধারায়ই তিনি রচনা করেছেন তাঁর গান। তবে কি তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুসারে ছিলেন নাকি তিনি বাস্তব অর্থে একজন সঙ্গীত অনুরাগী ছিলেন? এমন প্রশ্ন উদয় হওয়া একেবারেই অমূলক কিছু নয়। মীর মশারফ হোসেন এর গানগুলো লক্ষ্য করলে একটা বিষয় সবসময়ই সচেতন সমালোচকের মগজে উদয় হবে তা হলো তিনি গান লিখেছেন এবং তিনি তা সচেতনভাবেই তৎকালীন সময়ের সঙ্গীত—বলয় থেকে অনেকটা মুক্ত থেকে অর্থাৎ উনিশ শতকের সংগীতধারা থেকে মুক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন। এই কথার অর্থ এটিও নয় যে, মীর মশাররফ হোসেন তার গানগুলোকে তৎকালীন সময় থেকে চরম মাত্রার আধুনিকায়নে রূপান্তর করেছিলেন বরং তিনি তাঁর সময়ে তাঁর গান নিয়ে ছিলেন প্রায নিশ্চুপ। একদিকে সঙ্গীত লহরী'র গানগুলোতে রাগিণী'র উল্লেখ তেমন রয়েছে পাশাপাশি কিছু গানের কথা ছাড়িয়ে গেছে তৎকালীন সময়কে।
মশাররফ হোসেন তাঁর খেয়ালি মনের বেখেয়ালে নয় বরং সতর্ক দৃষ্টি রেখে রচনা করেছেন তাঁর একান্ত সঙ্গীত ভুবন যেখানে তাঁর চিন্তার ব্যাপ্তি সুপ্রসারিত এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঋদ্ধ যা কেবল ঊনিশ শতকেরই নয় সমগ্রকালের বাংলাসঙ্গীতের এক অপরিহার্য অধ্যায়।
তথ্যসূত্রঃ
১. মীর মশাররফ হোসেন, আমার জীবনী, মশাররফ রচনা—সম্ভার (পঞ্চম খণ্ড), (কাজী আবদুল মান্নান সম্পাদিত), বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৫, পৃ.২৯৩।
২. কাঙাল হরিনাথ, জলধর সেন। প্রকাশক— বেঙ্গল মেডিকেল লাইব্রেরী, কলকাতা। ১৩২০ বঙ্গাব্দ।
৩. রত্মবতী থেকে অগ্নিবীণা: সমকালের দর্পণে: মোহাম্মদ আব্দুল কাইউম। প্রকাশ:১৯৯১, ঢাকা।
অলংকরণঃ তাইফ আদনান