জলধি / পাঠ-পর্যালোচনা / ‘ও সর্বনাশ এসো’: কবির আত্মজাত বোধের অঙ্কুর
Share:
‘ও সর্বনাশ এসো’: কবির আত্মজাত বোধের অঙ্কুর

কেউ যখন বলেন, ‘আমার ভালোবাসা লেখা থাকে চর্যাপদের অক্ষরে’- তখন সেই ভালোবাসা দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। [যদিও জানি, কবি এখানে চর্যাপদের অক্ষর বলতে চর্যার ভাষাকেই বোঝাতে চেয়েছেন]। তখন খুব সহজে সেই ভালোবাসা আমরা আর পড়তে পারি না।
খুব কাছে গিয়ে নিবিড়ে না জড়ালে সেই ভালোবাসা অনুভবযোগ্য হয়ে ওঠে না। আর চর্যাপদের ভাষা আমাদের কাছে সহজবোধ্যও নয়। আবার যখন বলেন,-‘আমার রাগগুলো বাংলা অক্ষরে লেখা থাকে’-তখন আমাদের সহজেই অনুমেয় হয়, কবি রাগী স্বভাবী।
অনেকেই হয়তো কবি সম্পর্কে সেটাই জানেন। এই কাব্যগ্রন্থের কোনো পঙ্ক্তির ভেতর আমরা সেই স্বভাবের কোনো উচ্চারণ খুঁজে পাইনি। বরং, কবির স্বউচ্চারিত পঙ্ক্তির ভেতরে প্রচ্ছন্ন ভালোবাসার তীব্রতাকে খুঁজে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন কবি কামরুল বাহার আরিফ-এর এই সুতীব্র প্রেমাকাঙ্খার কথা, ভালোবাসার প্রচ্ছন্ন ঝর্নাধারার কথা।
“ও সর্বনাশ এসো”- কবির এই প্রেমিক সত্তারই নিরুপায় আহ্বান- আত্মজাত বোধের অঙ্কুর।
যখন বৈশ্বিক মহামারিতে ভূগছে স্বদেশ, মূল্যবোধের পোশাক খুলে- নষ্ট রাজনীতির যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে যাচ্ছে মানুষের নৈতিক অবস্থান, যখন মননশীল মানুষের শ্বাস নেয়ার জন্য উপযুক্ত অক্সিজেন সমৃদ্ধ কোনো বাতাস নেই, চেতনাকে পণ্য করে- মননশীলতার নামে যখন ঢ্যাপের খই ভাজা হচ্ছে যত্রতত্র; তখন অন্ধকারের নিভৃততম কোণে নিজেকে লুকিয়ে - ও সর্বনাশ এসো’ বলা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকে না।

কবিতা কবির নিভৃততম অনুভবের ফসল। কবি বহুবেদনায়, দীর্ঘ অন্ধকার যাত্রা শেষে, আত্মজাত উপলব্ধির সুগভীর তলদেশ থেকে মুক্তো হাতে করে উঠে আসেন। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে কবি নিজেকে ভাঙেন, গড়েন, আবার ভাঙেন। এই ভাঙা-গড়ার খেলায় ক্ষয় হতে হতে, কবি নিজেকে একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করান, আমরা তাকে সিদ্ধিও বলতে পারি। কবি যখন বলেন- ‘ও সর্বনাশ এসো’ তখন চর্যাপদের ভাষা বা বাংলা ভাষা দুটোই ম্লান হয়ে যায়, এই দু’য়ের সমগ্রতাকে ছাপিয়ে আমাদের সামনে অন্য কোন উপলব্ধি দ্বার খুলে যায়, কবি যেন পাঠককে অন্য কোন সুন্দর সর্বনাশের হাতে সঁপে দেন। এই সর্বনাশ হতে পারে কবির আত্মজাত বেদনার ক্ষরণ, হতে পারে কবির সুতীব্র প্রেমাকাক্সক্ষার স্ফুরণ, হতে পারে যাপিত জীবনোপলব্ধি খণ্ডাংশ, আবার হতে পারে কবির চুড়ান্ত আত্মসিদ্ধি।

কবিতায় ঋতুচক্র আছে, ষড়ঋতুর মতই কবিতা তার রঙ বদলায়। গঠনে-বক্তব্যে-প্রকরণে-মেজাজ ও ইমেজে বিভিন্ন ডাইমেনশনে কবিতা নিজের বৈভবকে প্রকাশ করে। কবি মনের ওপর, ঋতুচক্রের প্রভাব- সে অন্য কথা। কবি, তাঁর কবিতায়- সমকালকে ধরবে একথা সত্য। তবে কবির কবিতা কখনো কখনো সমকালকে ছাপিয়ে এক অভিনব উপলব্ধির চূড়ায় গিয়ে দাঁড়ায়, তখন তাঁকে আর সেখান থেকে নামানো যায় না। এ যেন অনেকগুলো মুক্তোর দানা পরপর সাজিয়ে মালা গাঁথার মত, সেখান প্রতিটি দানা মালার জন্য অপরিহার্য। একটি মুক্তোদানা সেখান থেকে টেনে নিলে গোটা মালাটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছত্রাকার হয়ে পড়ে। কবিতার শব্দবন্ধগুলো তাই পরস্পর জমাট বন্ধনে আবদ্ধ। এ প্রক্রিয়ায় কবিকে সহায়তা করে কবির চেতনা, মূল্যবোধ, ব্যক্তিগত জীবনদর্শন, কল্পনা, ব্যক্তিমানসের চিন্তাপ্রসূত উদ্ভাবনীশক্তি, অভিজ্ঞতা, প্রতিবেশের টানাপোড়েন ইত্যাদি। এগুলোর সংমিশ্রণেই কবি, তাঁর কবিতার নিজস্ব পথ তৈরি করে নেন, এই পথ পরিক্রমায় কবি এক সময় পৌঁছে যান নিভৃততম উপলব্ধির চূড়ান্ত দ্বারে। সেখানে কবি নিঃসঙ্গ- একক। শুধু এক আমিত্বকে সঙ্গী করে, তিনি তখন নিজেই নিজের ঈশ্বর ! সে আমিত্বও আবার কখনো কখনো বহুধা বিভক্ত। আপন সত্তাকে ভেঙে বিভিন্ন চরিত্রে দাঁড় করিয়ে কবি তখন নিজেকে খোঁজেন। শূন্যতাকে শরীরী কাঠামো দিয়ে তার সঙ্গে নিবিড় প্রেমালাপে মগ্ন হন। সেই আত্মদর্শনের পথে কবির সৃষ্টি তখন হয়ে ওঠে একক বৈশিষ্টে উজ্জ্বল। কবি কামরুল বাহার আরিফও এই পথ পরিক্রমায় হেঁটেছেন নিজস্ব স্বকীয়তাকে সঙ্গী করে। নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন- বহুমাত্রিক অনুভবে তার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
এখানে কবি কামরুল বাহার আরিফ এর এরূপ বৈশিষ্ট্যের কিছু পঙ্ক্তির উল্লেখ্য না করলেই নয়-
যেমন, চিরন্তন মানবধর্মকে তুলে এনেছেন
২৭ সংখ্যক কবিতায়-
যারে তুমি মানব বলো সে কি মানব ভাই?
দ্বন্দ্বটা তো লুকিয়ে আছে মানবহীনে, হিন্দু-মুসলিম তাই
মানব কোথাও নাই, কোথায় মানব সাঁই?
শুধু হিন্দু হলাম, মুসলিম হলাম মানব কোথা পাই?
 
অসীমের প্রতি জিজ্ঞাসা তথা আত্মজিজ্ঞাসা প্রকাশিত-৩৯ সংখ্যক কবিতায়-

কে তোরে সাজালো এমন রূপে!
কত প্রেম টেনে নিলি শুধু
ফিরিয়ে কী দিস তার কিছু?
কেন যে আসিস ফিরে এতো অপরূপে!
              
৫২ সংখ্যক কবিতায়-      
আমার গাঁয়ের ঐ পারে আরেকটি গাঁ আছে
গাঁয়ের সীমানা ছাড়িয়ে তারপরে সমুদ্র
আমি প্রতিদিন সমুদ্রে স্নান সারি ঐ গাঁ মাড়িয়ে

আত্মানুসন্ধানের কথা- ৪৫ সংখ্যক কবিতায়

আমি সময়কে খুঁড়ে খুঁড়ে খুঁচে খুঁচে
উদ্ধার করতে করতে ভীষণ ক্লান্ত যখন
তখন সব মাপজোখ শেষে দেখি,
এখনো পথ পৌঁছায়নি বৃক্ষতলে।

সীমা পেরিয়ে অসীমের সন্ধান- ৪৪ সংখ্যক কবিতায়

চোখটা যখন বন্ধ করি
চোখ খুলে যায় আরো
চোখের সীমা অসীম হয়ে
মুখ খুঁজে নেয় কারো।

অর্ন্তগত দহন-  ৫৫সংখ্যক কবিতায়

জীবনে কত কান্নার কথাই আমি জানি
চোখ থেকে জল গড়াবার আগেই
যা বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।

আশাবাদ- ২৫সংখ্যক কবিতায়

যা হারিয়েছে তা হারাক, যেথা যায় যাক,
অবারিত পৃথিবীর অবারিত হাত
দেখো, আলো হাতে দাঁড়িয়ে সূর্য সবাক!

-এই গ্রন্থের এমন আরো অনেক কবিতা আছে, যা কবির বহুমাত্রিক জীবনবোধের পরিশীলিত প্রকাশ, এবং তা কবির মনন জগতকে এক অনন্য উচ্চতায় দাঁড় করায়।
কবি কামরুল বাহার আরিফ তাঁর ‘ও সর্বনাশ এসো’ গ্রন্থে বিভিন্ন মাত্রিকে নিজেকে ধরতে বা দেখতে চেয়েছেন। ভিন্ন আয়োজনে বহুবিধ রূপান্তরে কখনো সরাসরি কখনোবা রহস্যাবৃত করে। কখনো সীমানার বৃত্তে, কখনো বৃত্ত ভেঙে সীমা ছাড়িয়ে উঠে গেছেন অসীমে। এ গ্রন্থের কবিতা যাত্রায় কবির স্বরায়ন সমতল, কখনোবা রহস্যময় জ্যোৎস্নাকুহকে আচ্ছন্ন। কবি কখনোই তাঁর স্বরকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যাননি। যেন তিনি পাঠককে ইশারায় কাছে ডেকে পাশে বসিয়ে তাঁর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখকথা একে একে শুনিয়ে যাচ্ছেন। এই গ্রন্থে ছোট ছোট পঙ্ক্তিগুলি কবির আত্মজাত জীবন জিজ্ঞাসা, আত্মদর্শন, প্রেম, আকাক্সক্ষা, নিজেকে বহুধাবিভক্ত করে অনুবিক্ষণে দেখা নিজস্ব অনুভবের হীরকচূর্ণ।‘
প্রাসঙ্গিক ভাবেই আরো কিছু পঙ্ক্তিমালার উল্লেখ করতে চাই যা, বোধের চরম উন্মেষ ঘটিয়ে আকস্মিকতায় বহুমাত্রিক হয়ে উঠেছে।
যেমন: ৪ সংখ্যক কবিতায়-
হতাশার বাড়ি কোন দিকে?
নর্থে নাকি ইস্টে?
কোন ঋতুতে বেশি আসে?
উইন্টার সামার না রেইনিতে?
যাকে নিতেই হয়, ফেরত না দেয়ার শর্তে?

 
৭ সংখ্যক কবিতায়-
নির্মোহ এক ভালোবাসার
আকাশ ওড়া পাখি
তোরে এই জীবনের জটিল বেলায়
কোথায় আমি রাখি।


১৬ সংখ্যক কবিতায়-
 ...................................
এমন করে ডাকিস কেনো সকাল দুপুর বিভূঁই
আমি তো এই অন্ধচোখে তোর পরাণের নিধু-ই


১৭ সংখ্যক কবিতায়-

আমি মরে গেলে জিতে নিও যত অহংকার
আপাতত হাত রাখো নিত্য এ পোড়া সংসার

২৮ সংখ্যক কবিতায়-
কুয়াশায় ভিজে গেছে ভোর
আমি তো কাঁপছি খুব,
অবস্থা কী তোর?


৪৭ সংখ্যক কবিতায়-
কোন কিছু বুকের ক্ষত নিরাময় হতে নেই

বারবার সুখ হয়ে ফিরে আসে বাঁচার তাগিদে


৫৮ সংখ্যক কবিতায়-
সত্যের নামান্তরে
শুধুই অন্ধকার সাঁকো পার হয়ে যাচ্ছি,
তবু হা-হুতাশ নাই
কী পাচ্ছি, কী না পাচ্ছি!


কবিতায়- আধুনিকতা শব্দটি আপেক্ষিক। সময় নির্ভর। বাংলা কবিতা সম্পর্কে অনেকেই বলেন- কবিতা কোন ইজমের দাসত্ব করে না। আমরা অনেকেই হয়তো সে কথা মানি। তবু কবিভেদে ভিন্ন ভিন্ন শিল্পাদর্শ তো থাকেই। কিছু আদর্শ ও চেতনাকে আশ্রয় করেই কবি তাঁর অবস্থানে গিয়ে দাঁড়ায়। কবি কামরুল বাহার আরিফও সেই শিল্পাদর্শকে সঙ্গী করে পথ হেঁটেছেন, তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন নিজস্ব উপলব্ধি, আত্মদর্শন ও প্রেম। কামরুল বাহার আরিফ মূলত প্রেমিক কবি। তাঁর কবিতায় তিনি প্রেমকে নির্মাণ করেছেন বহুবিধ বিন্যাসে। প্রেমকে তিনি কখনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে, তার রূপসুষমা ছুঁয়ে দেখেছেন, আবার কখনো তাকে ইন্দ্রিয়াতীত করে অপার্থিব প্রেমাকাক্সক্ষা তীব্র করে তুলেছেন। তাঁর কবিতার ভাব, ভাষা ও প্রকরণের মধ্যে সেই প্রেমিক মনের কোমল হাতছানি আছে, নদীর কুলুধ্বনিতে নৌকা ভাসানোর মত ছন্দায়িত দোলা আছে। আছে ভাষার সুললিত বিন্যাস। এ কথা আমি শুধু ‘ও সর্বনাশ এসো’ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে বলছি না। আমি তাঁর সমগ্র কাব্যবিন্যাসকে মাথায় রেখেই বলছি। এ প্রসঙ্গে কিছু চরণ আমি পুরাতন পাতা থেকে তুলে আনতে চাই-
‘আকাশ থেকে দেখেছো কি ভেসে যাওয়া কচুরিদল কোনো,
যে তোমার অক্ষরের নদীতে ফুল ফুটিয়ে দুলতে দুলতে
     

কত কাব্য করে তোমাকে পেরিয়ে যায় প্রতিদিন?’ [দূর জলের প্রতিবিম্বে: প্রেমবৃত্তে জল ও নারী(২০১৭)]
আবার-
‘একটি পাখি এক জীবনে এক থাকে না
সঙ্গি থাকে, জীবন-যাপন চেনা জগত
প্রেমপার্বন- কী থাকে না? [ দৃশ্যের মাঝে অদৃশ্যের ফারাক: প্রেমবৃত্তে জল ও নারী (২০১৭)]
অন্যত্র বলছেন-
‘আমার বুকেও এক বাড়ন্ত কথার ফুলহীন বৃক্ষের বাস
সেইসব অজস্র কথারা ঝরে পড়ে জোনাকির বনে
সেখানে শ্রোতা নেই- শূন্য জীবনের ভুল! [অনর্থ পাতায় আঁকা পোট্রেট: পাতার ওপর লেখা আছে আমার কিছু(২০১৯)]

কবি কামরুল বাহার আরিফ-এর কবিতার ভাষার এই সুললিত বিন্যাস, তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘সূর্যের ম্যাপ ছুঁয়ে’(২০০৮) থেকে শুরু করে তার নবম কাব্যগ্রন্থ ‘পাতার ওপর লেখা আছে আমার কিছু’ (২০১৯) পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে আমরা প্রত্যক্ষ করি। এই দীর্ঘ কবিতা যাত্রায়, কবি ক্রমাগত নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে, ভাষার এই সুললিত ঢং কে আশ্রয় করে ধাপে ধাপে উতরে গেছেন প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে। ভাব-ভাষা ও বক্তব্যে নিজস্বতা ও উৎকর্ষের চিহ্ন রেখে গেছেন তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পর্যন্ত।

‘ও সর্বনাশ এসো’ (২০২০) কবির দশম কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ১৫ সংখ্যক কবিতা প্রথম চরণটি গ্রন্থের নামকরণ হিসাবে চিহ্নিত। ‘ও সর্বনাশ এসো... অসাধারণ এই তিনটি শব্দের ওজস্বীতা গোটা কাব্যগ্রন্থকে ধারণ করে আছে। এই তিনটি শব্দ দিয়ে দিয়ে কবি এমন এক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন যা ১৫ সংখ্যক কবিতার বাকি চরণগুলোকে ম্লান করে দিয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো আকৃতিগত দিক থেকে যেহেতু অনেকটাই ক্ষুদ্র, তাই এই গ্রন্থের কবিতাগুলোর ভাষা প্রকরণও ভিন্ন।এই কাব্যগ্রন্থে কবি- উপমা, উৎপ্রেক্ষা, শব্দালঙ্কার প্রভৃতি, কবিতার বহুবিধ অনুসঙ্গকে সচেতন ভাবে পরিহার করে বক্তব্যকে সরাসরি করেছেন, অথবা ইঙ্গিত করেছেন। কবিতাকে নির্মেদ করেছেন এবং কাজটি তিনি যথেষ্ট কৃতিত্বের সাথেই করেছেন।

‘ও সর্বনাশ এসো’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো আকৃতিতে ছোট হলেও কবির নিজস্ব ভাষা-স্বকীয়তা ধারণ করে অনন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। এই কাব্যগ্রন্থে সন্নিবেশিত পঙ্ক্তিগুলো সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত যাদের আকস্মিক উপস্থাপন আমাদের বোধের ভিতকে নড়িয়ে দেয়।
‘ও সর্বনাশ এসো’র পঙ্ক্তিগুলো আসলে আমাদের ভঙ্গুরস্বভাবী জীবনের খণ্ডাংশ মাত্র। অধিকাংশই কবিতাই অক্ষরবৃত্ত, দু’একটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ছাড়া বাকিসব মুক্তছন্দে লেখা যা সুখপাঠ্য।
এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো সম্পর্কে বা কবির দৃষ্টির গভীরতা, অনুভূতির সুক্ষèতা, শব্দচয়ন, গড়ন, গঠন, বক্তব্য, প্রেক্ষিত ইত্যাদি বিবেচনায় হয়তো অনেক কথাই বলা যায়, কিন্তু বলতে চাচ্ছি না; বলার অবকাশও কবি রাখেননি। কাব্যগ্রন্থের ২ সংখ্যক কবিতায় কবি যখন নিজেই উচ্চারণ করেন- যে বিষের নাম সায়ানাইড, তার পরিমাণ জানা খুব জরুরী নয়।                           



অলংকরণঃ তাইফ আদনান