জলধি / গল্প / মিসিং গার্ল
Share:
মিসিং গার্ল

মিসিং! কথাটা শুনলেই নানারকম ছবি মাথার চারপাশে ঘুরপাক খায়। সেই ছবিগুলো পাশাপাশি সাজিয়ে একটা কোলাজ তৈরী যদি হয় তাহলে কেমন হবে বিভিন্ন খন্ডচিত্রের সেই কোলাজ! সেই ভাবনায় তাড়িত হয়েই এই কাহিনীর বিন্যাস। শুরুতেই বলে রাখা ভালো যে কাহিনীতে উল্লেখ্য স্থান কাল এবং সব চরিত্র কাল্পনিক।

খন্ডচিত্র একঃ                   

মেয়ের নাম কি?                                                             

টুকি, টুকি নস্কর। ওই নামেই আমরা ডাকি। গাঁয়ে সবাই ওকে টুকি বলেই চেনে।                  

তাহলে যাও টুকি টুকি করে গ্রাম মাথায় করে মেয়েকে খোঁজো। যত্তো সব গেঁও মাতারি নিয়ে কারবার। বলছি ইস্কুলের খাতায় মেয়ের নাম কি লিখিয়েছিলে?                                        

আজ্ঞে মালতিলতা। মালতিলতা নস্কর।                                                

মেয়ের কোন ছবি আছে?                                                          

আছে, কেলাস এইটে পড়ার সময় সরকার থেনে টাকা দেল। ব্যাঙ্কে বই করার জন্য পাঁচ ছ খানা ছবি তখন করা ছেল। দু চারটে ঘরে আছে।                                              

লকডাউনের সময় তোমার মেয়ের কোন ক্লাস ছিল?                                    

আজ্ঞে নাইন। সামনের বছর বোর্ডের পরীক্ষায় বসার কথা ছেল। এর মধ্যি কোন খপ্পরে পড়লো কে জানে!  

মেয়ে তোমার ভেগেছে বুঝেছ। নাম তো রেখেছো খাসা, মালতিলতা। লতিয়ে লতিয়ে নির্ঘাৎ কারোর গলায় ঝুলে পড়েছে।                                                     

আজ্ঞে …..তা কি করে হয়! কারোর সাথে ভাব ভালোবাসা হলে আমি অন্তত ……            

ব্যাস ব্যাস অনেক হয়েছে। এবার যা বলছি ভালো করে শোন। থানার বড় বাবুর কাছে একটা দরখাস্ত দিতে হবে। সাদা কাগজে কাউকে দিয়ে ভালো করে সবটা লেখাবে। মেয়ের চেহারা, গায়ের রং, শরীরের উচ্চতা, ভেগে যাবার দিন কি পোশাক পড়েছিল এসব তো থাকবেই। তাছাড়া গ্রামের কোন ছোকরাকে সন্দেহ অথবা বেচাল দেখলে সেটাও লেখার মধ্যে যেন থাকে। স্টুডিও থেকে মেয়ের ছবির বেশ কিছু কপি বানিয়ে নেবে। থানায় আমাদের কাজে লাগবে। দরখাস্তে মেয়ের বাবা এবং তুমি দুজনেই সই করবে।            

আজ্ঞে টুকির বাবা তো এখেনে নেই। আমি সই দেলে হবে নে?                              

কেন, সে কোথায়?                                                             

অনেক দূরে আছে গো মেজবাবু। বিহারের বেগুসরাই। ঢালাই লোহার কারখানায় কাজ করে। লক-ডাউনে দশ দশ টা মাস ঘরে বসে ছেল। মাস চারেক হয় আবার কাজে লেগেছে। যেতে আসতে বড্ড হ্যাপা।                                 

তোমার ভাসুর দেওর আছে তো। তোমার সাথে তাদের একজনকে দিয়ে দরখাস্তে সই করিয়ে দেবে।         

বলবো, তবে রাজী হবে বলে মনে হয় না! ভজন দা আপনার কাছে পাঠিয়েছে, যা করার আপনিই করবেন। আমার মেয়েটারে খুঁজে দ্যান মেজবাবু।                                                                                                              

ভজন গোলদারের চিরকুট হাতে এসেছো বলেই তোমায় অনেক সময় দিলাম বুঝেছ আলতা রানী নস্কর।  এখন তুমি বাসায় যাও। আমায় রাউন্ডে যেতে হবে।

খন্ডচিত্র দুইঃ

এন জি ওর প্রতিনিধি হিসাবে সুয়োমোটো কেস তোরা করতেই পারিস সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে শর্ট সার্কিটে হারুণ শেখের ঘর আগুনে পুড়ে যাওয়া নিয়ে কারোর কিন্তু দ্বিমত নেই রিয়া। তাছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকারী তহবিল থেকে ওরা ভালো টাকাও পেয়েছে।                           

যদি বলি এই কমপেনশেসনের পিছনে অন্য গল্প আছে!                                        

তুই কি মীন করতে চাইছিস?                                            

সেটাও তুই আমার মুখ থেকেই শুনবি তাই তো!                                    

না মানে..                                                                 

পুলিশের চাকরি করতে করতে তুই অনেক বদলে গিয়েছিস অনু। বাট কলেজ লাইফের সেই ভ্যাবলামি তোর আজও আছে দেখছি। বড়িতেও কি বউ বাচ্চার সাথে এভাবেই হেঁয়ালি করিস?            

কি রকম!                                                              

আরে ঐ যে কলেজ়ে যেমন করতিস। সব জেনেও না জানার ভান! ইন্টারেস্টিং কোন ঘটনা নিয়ে তোকে কোশ্চেন করলে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতি তার পর না মানে.. তাই নাকি…হ্যাঁ হ্যাঁ সে রকমই ওরা বোধহয় বলছিল। মনে পরে সেসব অনু?

কি সাংঘাতিক মেমরি তোর রিয়া! কতদিন আগের সব কথা। পারিসও বটে তুই।            

কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই মিস্টার অনুব্রত রায়। তোদের ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের কাছে সব খবর আছে। হারুণ শেখের আগের পক্ষের মেয়ে সায়রা জাস্ট চালান হয়ে গিয়েছে। কমপেনশেসনের পিছনে এটাই গল্প।  

তুই সিওর?

হান্ড্রেড পারসেন্ট, এবং পাচার চক্রের সাথে চেইন করেছিল হারুণের দ্বিতীয় বউ মরিয়ম বিবি। ঘরে আগুন লাগার পর থাকবে কোথায় এই অজুহাতে সায়রাকে ডোমকলে মরিয়মের বোনের বাড়িতে পাঠানো হয়। তিন মাস পর সেখান থেকেই সায়রা নিখোঁজ।

থানায় মিসিং ডাইরি হয়েছিল?

আমাদের কাছে যা খবর মরিয়মের বোন এবং স্বামী লোক্যাল থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছিল। ওদিকে তখন আবার ইলেকশনের হাওয়া। পলিটিক্যালি কিছু দিন হৈ চৈ তার পর যা হয় আর কি। সর্বশেষ  পুলিশি সূত্রের খবর নিখোঁজ হবার কয়েক সপ্তাহ পর সাযরাকে তারাপীঠ মন্দিরের কাছে কোন একটা হোটেলের কাছে দেখা গিয়েছিল। তার পর খবর চাউর হলো সায়রা কোন এক হিন্দুস্থানী ছেলেকে বিয়ে করে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে। বেজাতে বিয়ে করে মেয়ে মুখ পুড়িয়েছে অতএব আপদ বিদায় হয়েছে।  মরিয়ম বিবির হাত ধরে পাচার চক্রের প্ল্যান সাকসেস এবং গোটা ব্যাপার ধামা চাপা।

ট্রাফিকিং এর জন্য বীরভূমের তারাপীঠ আশেপাশের জেলা এবং নিয়ার-বাই স্টেটের করিডোর সেটা ঠিক, কিন্তু সায়রাকে ওখানে দেখা গিয়েছে মানেই ও পাচার চক্রের শিকার এটা তোদের কেন মনে হচ্ছে রিয়া? ওর বিয়ের খবরটা তো সত্যিও হতে পারে! 

অনু, কিছুতেই সেটা সম্ভব নয়। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে সায়রার সাথে কারোর বিয়ে হয়েছে তাহলে সেটা জাস্ট লোক দেখানো এর বেশি কিছু নয়। হারুণ শেখের বউ মরিয়ম বিবি টাকার বিনিময়ে মেয়েকে চালান করেছে এবং তার কিছু এভিডেন্স অলরেডি আমরা জোগার করেছি। সিওর হয়েছি তাই সুয়োমোটো কেসের দিকে এগোতে চাইছি। টাইম টু টাইম তুই আমাদের একটু হেল্প করবি এবং সাজেশন দিবি, ব্যাস আর কিচ্ছু চাই না। বন্ধু হিসাবে তোর কাছে এটুকু আশা আমি করতেই পারি অনু।

খন্ডচিত্র তিনঃ

কালীপুজোর দিন কয়েক আগে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থেকে ঝাড়গ্রামের ধাঙ্গিকুসুম আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিল মশাই টুডুর মেয়ে ইনু। তের পেরিয়ে সবে চোদ্দ ছুঁয়েছে কিন্তু শরীরের গঠন দেখলে পনের ষোল  মনে হবে। গরীব খেত মজুরের মেয়ে হলে কি হবে ইনু টুডুর চেহারা বেশ উজ্জ্বল। চোখ জোড়ায় অদ্ভূত মায়া। বাদনা পরব দেখবে বলে মেয়েকে রেখে এসেছিল মশাই টুডু। সপ্তাহ খানেক পরে গিয়ে নিয়ে আসবে এমনটাই ঠিক ছিল। কালী পুজোর অমাবস্যায় বাদনা পরব। বিজয়া দশমীর পর থেকেই শুরু হয়  প্রস্তুতি। দিন যত এগিয়ে আসে গোটা গ্রাম জুড়ে সাজ সাজ রব। মাটির দেয়াল উঠোন জুড়ে আল্পনা। ঘর বারান্দা থেকে গোয়ালঘর কিছুই বাদ যায়না। টানা পাঁচ দিন ধরে চলে উৎসব। একেক দিন একেক রকমের রীতি ও আচার। সারা বছর চাষ এবং অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও পরবের দিন গুলো বিশ্রাম  আর আনন্দ। ধামসা মাদল নিয়ে নাচ গান আর হাঁড়িয়া।           

বান্দোয়ানের চাইতে ধাঙ্গিকুসুমের বাদনা পরবে অনেক বেশি জাঁক। ইনু এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দ্যাখে আর অবাক হয়। ইদানীং পরব দেখতে শহর থেকে বাবুরা গাড়ি ছুটিয়ে আসে। রাত পর্যন্ত থেকে ভোরের দিকে দূরের হোটেলে ফিরে যায়। হাতে তাঁদের বড় বড় ক্যামেরা। কেউ ছবি তোলে কেউ ভিডিও করে। আদিবাসী সহজ সরল মানুষ ক্যামেরায় হাসিমুখে পোজ দেয়, নাচ করে গান গায়। ভিডিও ক্যামেরায় নিজেদের দেখে খুশিতে ছলকে ওঠে। অনেকের সাথে ইনুর ছবিও ওঠে। ওর চলা ফেরা মায়াবী চাহনি শহুরে চোখের নজর এড়ায় না। পরবের শেষ রাতে চলছে গ্রাম-জাগানোর পালা। রাতে গরু মোষ ঘুমবে, মানুষ জেগে থাকবে। কেউ যাতে ঘুমিয়ে না পড়ে সেজন্য এক দল গ্রামবাসী ধামসা মাদল বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। পিঠে পুলি খেয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই ফিরে গিয়েছে শহুরে বাবু্দের গাড়ি। হাঁড়িয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে দু চার জন বাড়ির দাওয়ায় বসে ঢুলছে। খোঁজ নেই শুধু ইনু টুডুর। নেই তো নেই। মহল্লার পর মহল্লা জুড়ে হাঁকা-হাকি ডাকা-ডাকি। ডোবা পুকুর বাগান খেতি কোথাও কোন সাড়া নেই।

খবর পেয়ে বান্দোয়ান থেকে পাগলের মতো ছুটে আসে মশাই টুডু। বেলা গড়িয়ে তখন বিকেল। আত্মীয়ের সাথে থানার মেঝেতে বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকায়। পুলিশ বাবুর বাঁধা গতের প্রশ্ন- কী রঙের জামা গায়ে ছিল? মেয়ের হাইট কত? গায়ে হাতে পায়ে বা শরীরে কোথাও কাঁটা ছেড়ার দাগ আছে?  প্রশ্নের উত্তর দেয় না মশাই টুডু। থানার দেয়ালে কাঠের বোর্ডের ওপর বিভিন্ন বয়সের মেয়ের ছবি সাঁটানো। মেয়ে ইনুর ছবিও ওখানে ঝুলবে! মশাই টুডুর পায়ের তলার মাটি সরে যায়।

খন্ডচিত্র চারঃ

মধ্য কলকাতার নামী গাড়ির শোরুম মালিকের মেয়ে ঝিলম কাউর। খ্রীষ্টমাস ইভের পার্টিতে গিয়ে বাড়ি ফেরে নি। মধ্যমেধার ছাত্রী, টেনেটুনে গ্রাজুয়েশন। তার পর বাবার অর্থের জোরে বিদেশী ইউনিভার্সিটির  ডিগ্রী নিতে ছুটলো ইউ কে। ধনকুবের পরিবারের মেয়ে, বিলাসিতা এবং বৈভবের মধ্যে বেড়ে ওঠা। চেহারাও দেখবার মতো। বিদেশের মাটিতে পা দিয়ে বদলে যায় কেশ বিন্যাস এবং সাজ পোশাক। ঝট করে দেখলে ভারতীয় বলে মনে হওয়া মুশকিল। সেখান থেকেই ঝিলমের রঙীন স্বপ্ন দেখা শুরু। পড়াশুনায় ডঙ্কা বাজিয়ে উইক এন্ডে বিদেশী বন্ধুদের সাথে পার্টি অথবা লং ড্রাইভ। নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে অ্যারেস্ট হয় দু দুবার। সেই খবর কলকাতায় পৌঁছনো ছিল সময়ের অপেক্ষা। মেয়েকে   ফিরিয়ে আনতে দেরী করে না ঝিলমের মা ও বাবা।

অভিজাত এলাকার বাসিন্দাদের একে অপরকে না চেনা এবং না জানাটাই দস্তুর। কেউ কারোর খোঁজ রাখে না। ঝিলমের ক্ষেত্রেও তাই হলো। বাড়ি ফিরে কিছুদিন পারিবারিক অনুশাসন তার পর যে কে সেই। স্বাধীনচেতা মেয়ে ঝিলমের ঘরে মন টেকে না। লন্ডন থেকে ডেভিড নয়তো টনির ফোন আসলে ঘরের দরজা বন্ধ করে কথা বলে। রঙীন নেশার হাতছানিতে ঝিলমকে প্রলুব্ধ করে দুজনেই। প্রথম দিকে টনির দিকে ঝুঁকলেও পরে ডেভিডকেই বেছে নেয় ঝিলম। ছোট একটা হ্যান্ডব্যাগ আগে থেকেই বিশ্বস্ত বান্ধবীর বাড়িতে রেখে আসে। খ্রিষ্টমাসের পার্টি থেকে বেরিয়ে ভোরের ফ্লাইট ধরে প্রথমে দিল্লি তার পর দুবাই হয়ে পরদিন সকালে লন্ডন। ঝিলমের গোটা যাত্রা পথের রূপকার এবং ব্যবস্থাপক ছিল ডেভিড। লন্ডনে পৌঁছে প্রথম দিন হোটেলে বিশ্রাম তার পর দিন এক চার্চে বিয়ে। পরের দিন সন্ধ্যায় বিলাসবহুল জাহাজে নেদারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় দুজনে। বন্ধু বান্ধবীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে ঝিলমের প্রভাবশালী ধনকুবের বাবা ময়দানে নামতে দেরী করেন না। ততদিনে ডেভিড এবং ঝিলম প্যারিস হয়ে ইতালির মাটিতে পা রেখেছে।

ভেনিসের আউটস্কার্টে এক হোটেলের রুমে ঝিলমকে রেখে বেরিয়ে যায় ডেভিড। মিনিট কুড়ি পর বেজে ওঠে ঝিলমের মুঠোফোন। ডেভিডের কল। দারুণ একটা সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে আসছে ডেভিড। এই ক’দিন খুব ধকল গিয়েছে শরীরের ওপর। ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াশ-রুমের দিকে পা বাড়াতেই বেজে ওঠে ডোরবেল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে দরজা খুলতেই চমকে ওঠে ঝিলম। দীর্ঘ সুঠাম চেহারার এক নাইজেরিয়ান ঝিলমের দিকে তাকিয়ে দু চোখ নাচাচ্ছে, মুখে দুষ্টূমির হাসি। দরজা বন্ধ করতে গিয়ে ধাক্কা খায় ঝিলম। নাইজেরিয়ান ছেলেটির পেশি শক্তির কাছে হার মানে। ক্লায়েন্টের অ্যাকসেস কনফার্ম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে ডেভিড তার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে পা বাড়ায়। ঝিলমের উদ্দেশ্যে পাঠানো ডেভিডের সারপ্রাইজ গিফট সময় নষ্ট করে না। ঝিলমের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ডুয়াল সিম কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দেয়। কেউ কারোর মুখের ভাষা জানে না, বোঝে না। বিকট জান্তব উল্লাসে ঝিলমকে জাপটে ধরে শরীরী ভঙ্গী এবং চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দেয় –তুমি আমার কাছে বিক্রি হয়ে গেছ বেবী।

আমার চারটি খন্ড চিত্রের কোলাজ তৈরী এখানেই শেষ। এবার বাকি কাঁটা ছেড়ার কাজ় এবং সেটা শুরু করছি পিছন থেকে।                                                        

উৎসবের মরশুমে বহু মেয়ে নিখোঁজ হয়। তাদের মধ্যে নাবালিকার সংখ্যাও একেবারে কম নয়। আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া এবং বেড়ানোর সুযোগে ইতি উতি চাহনি চোখাচোখি। তার পর ভুল রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হারিয়ে যায় চেনা পথ। কথাগুলো টেলিভিশনে টক শোয় এক মহিলা পুলিশ আধিকারিকের মুখে শোনা। ওনার এই মন্তব্যের নির্মম সত্যতার প্রমাণ মশাই টুডুর মেয়ে ইনু। কিন্তু  আমার শেষ খন্ডচিত্রের চরিত্র ঝিলমের ক্ষেত্রে সেটা প্রজোয্য নয়। ঝিলম কাউর আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের শিকার হয়েছিল। ইন্টার পোলের সাথে যুক্ত আমার নিকট আত্মীয়ার বান্ধবীর সুত্রে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের শিকার হওয়া কয়েকটি ঘটনা আমার জানার সুযোগ হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই এই সব যুবতী মেয়েরা  প্রায় এক পোশাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বন্ধুর সাজে প্রেমিক যে কদিন সঙ্গে থাকে নতুন পোশাকের অভাব হয় না। লন্ডনের হার-উইচ পোর্টে জাহাজের কেবিনে ঝিলমকে ডেভিডের গিফট নতুন পোশাকের সেট এবং এক জোড়া জুতো। নেদারল্যান্ড থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ককপিট ব্রাসেলস ছুঁয়ে প্যারিস। সেখান থেকে ইতালির ভেনিস, আরও তিন দফায় একই রকমের গিফট। ভেনিসের হোটেলে চেক ইন করে হাউস কিপিং কল করে ডেভিড। অন্তর্বাস সহ চার সেট পোশাক এবং তিন জোড়া জুতো লন্ড্রী ব্যাগে জমা করে দেয় ঝিলম। সারপ্রাইজ গিফট এবং নতুন পোশাক কেনার অছিলায় অদৃশ্য হয় পাচার চক্রের মিডিয়েটর ডেভিড। হোটেলের লন্ড্রীব্যাগে জমা হওয়া ঝিলমের জুতো এবং পোশাক পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট অবস্থানে। শিকারকে প্রলুব্ধ করা থেকে নতুন ক্লায়েন্টের হাতে তুলে দিতে খরচ যা হয় তার চেয়ে বহুগুণ অর্থ মূল্যের নিষিদ্ধ মাদক লুকোনো থাকে ভিকটিমের ছেড়ে দেওয়া পোশাক এবং জুতোয়। ট্যুরিস্ট ভিসার সৌজন্যে ওরা কাসটমসের নজরদারি থেকে প্রথম দিকে কিছুটা ছাড় পায়। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হলেই শুরু হয় সমস্যা। এই সব মেয়েরা তখন  পোশাক এবং শরীরের গোপন অঙ্গে মাদক লুকিয়ে জলযানে চোরা পথে যাতায়াত করে। যারা ধরা পড়ে তাদের কপালে জোটে অকথ্য নির্যাতন এবং হাজত  বাস। উত্তেজক নেশা ছাড়াও ক্রমাগত পুরুষ সঙ্গী বদলে যাওয়ার কারণে মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে অথবা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে ঝিলমের মতো যুবতীদের জীবনদীপ অকালে নিভে যায়। 

তিন নম্বর খন্ডচিত্রের ত্রয়োদশী কিশোরী ইনুর বাবা মশাই টুডু। ওর বিরুদ্ধে গ্রামের ছেলে বুড়ো সবার একটাই অভিযোগ। টাকার লোভে মা মড়া মেয়েটাকে বিক্রি করে দিয়েছে মশাই। গরীব খেতমজুর মশাই টুডুর আঁতে ঘা লাগে। বুকে পাথর বেঁধে জলে ঝাঁপ দেয়। বছর খানেক পরের ঘটনা। বান্দোয়ানের বড়াবাজার থানায় ইনু টুডুর পড়শী এবং নিকট আত্মীয়দের ডাক আসে। নাবালিকা কিশোরী সহ বিবাহিত এবং অবিবাহিত যুবতীরা থানার ভেতরের ঘরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। পুলিশ দিদি হেঁকে জিজ্ঞাসা করে “ভালো কইরে দেইখে লাও। তুমাদের বিটি ইখানে আছে কি না বইলবে”।  

চিনতে পারলে কি হবে! মেয়ের দায় কে নেবে? পড়শি এবং আত্মীয়েরা মাথা নেড়ে ঘরের বাইরে আসে। ইনু টুডুর ঠাঁই হয় সরকারি হোমে।

মিসেস রিয়া সেনের এন জি ও “আলোর দিশারী” দুঃস্থ এবং অভাবী পরিবারের মেয়েদের ভরসার জায়গা। পড়াশুনো এবং নানাবিধ হাতের কাজ শেখা ছাড়াও সমাজকল্যাণ মূলক কর্মকান্ডে ঐ মেয়েরা যুক্ত থাকে। স্বামী স্ত্রীর বৈবাহিক জীবনের অশান্তি এবং বিচ্ছেদ, সেখানেও মুশকিল আসান রিয়া সেনের আলোর দিশারী। সবক্ষেত্রে সাফল্য আসে তা নয় তবে শেষ পর্যন্ত লড়ে যান মিসেস সেন। এন জি ওর কাজ এবং অস্তিত্ব সবটাই দান ধ্যানের ওপর নির্ভরশীল। দেশী ও বিদেশী সংস্থার কাছে হাত পেতে টাকা  নিতে হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু শর্তপূরণের দায় ঘাড়ে চাপে। মিসেস রিয়া সেনের আলোর দিশারীর কাজের ক্ষেত্রেও হয় নতুন সংযোজন। হারিয়ে যাওয়া কিংবা নিখোঁজ অথবা কিডন্যাপ হওয়া মেয়েদের ব্যাপারে প্রশাসনিক স্তরে যোগাযোগ এবং প্রতিনিয়ত লেগে থাকা। ওই সব মেয়েদের খুঁজে বের করে তাদের যথা স্থানে পৌঁছে দেওয়া এবং সুরক্ষিত রাখা প্রাশাসনের দায়। সেই কাজে আইনগত নিয়মের ফ্যাকরা আছে, আবার নানাবিধ বাঁধা এবং ঝুঁকিও আছে। বছর তিনেক আগে রাজ্য এবং বিহার পুলিশের জয়েন্ট অপারেশনে কিসানগঞ্জ থেকে বীরভূমের লাঙ্গলহাটার একটি মেয়ে পাচার চক্রের হাত থেকে উদ্ধার হয়েছিল। মেয়েটি নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া মাত্রই প্রশাসনের সাথে রিয়া সেনের এন জি ও একদম এঁটুলির মতো লেগে ছিল। এই ঘটনার মাস ছয়েক পর নদীয়ার গাংনাপুরের ঘটনা। একটি নাবালিকা কিশোরী প্রলোভনের শিকার। প্রতিবেশী রাজ্য বাংলাদেশ সীমানার অনতিদূরে মধ্যরাতে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য মিসেস রিয়া সেন প্রশাসনকে যথাসময়ে পৌঁছে দিতে না পারলে ভোরের আলো ফোটার আগেই নাবালিকা কিশোরীটি চালান হয়ে যেত।

তবে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থেকে হারুণ শেখের মেয়ে সায়রার নিখোঁজ হবার কেস টা মিসেস সেনের অফিসে রেজিস্টার্ড হয় অনেক দেরীতে। কলেজের সহপাঠী পুলিশ আফিসার অনুব্রত রায় প্রভূত সাহায্য করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঝাড়খন্ড বিহার হয়ে উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ পর্যন্ত সায়রাকে ট্র্যাক করা সম্ভব হয়েছিল। সায়রাকে যারা কিনেছিল সেই পাচার চক্রের মাথায় প্রভাব এবং শক্তিশালী কয়েকজনের হাত নিশিত ভাবেই ছিল। সম্ভবত সেই কারণেই ভিকটিমকে সেফ প্যাসেজ দিতে আন্তরাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসনের মুভমেন্টের গতি শ্লথ হয়ে যায়। মাস চারেক পর রাজ্য প্রশাসন সূত্রে রিয়া সেনের কাছে খবর আসে সায়রাকে শেষ দেখা গিয়েছিল আরেক প্রতিবেশী দেশ নেপাল ঘেঁসা রাজ্য গোরক্ষপুর বর্ডারে।

হিম্মত দেখিয়েছিল বটে আলতা রানী নস্কর। প্রশাসনিক কোন পদে না থাকলে কি হবে ভজন গোলদার   কাকদ্বীপের শেষ কথা। ভজনের পাঁচজন বিশ্বস্ত এবং কাছের লোকের মধ্যে আলতা রানী একজন। ভোট  পর্ব মিটে গেলে ভজন গোলদারের কাছে মেয়ে টুকির ব্যাপারে সরব হয় আলতা। অভিযোগের সুরে বলে ওঠে –পোশাসন না ছাতার মাতা। অকম্মার ঢেকি সব। এবার তুমি কিছু একটা করো ভজন দা নইলে আমি কিন্তু আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবো নি। হয় এসপার নয় ওসপার করে ছাড়বো বলে দিচ্ছি। তকন তুমি কিছু বলতে এসো না যেনে।  

খবরের কাগজ টেবিলে রেখে আলতার চোখে চোখ রাখে ভজন গোলদার। কিছুক্ষণ পর শান্ত ভাবে বলে –কথাটা তোকে আগে বললেই দেখছি ভালো হতো।                                   -

কি কতা?                                                                  

তোর মেয়ে টুকি                                                             

টুকির খপর তুমি জানো! তাইলে এত দিন আমায় কিছু বলো নি কেনে?                            

থানার বড়বাবুর কাছে যেটুকু শুনেছি সেটা খুব ভালো নয়রে আলতা। কলকাতা বন্দর এলাকার এক নিষিদ্ধ পল্লীতে তোর মেয়ে টুকিকে মাস তিনেক আগে দেখা গিয়েছিল। সোর্স ধরে থানা পুলিশ দৌঁড়ঝাপ কিছুই বাকি ছিল না। কিন্তু তার আগেই টুকি……                      

কি হয়েছে আমার টুকির, বলো? চুপ মেরে থেকো না ভজনদা। পসকের করে বলে দাও টুকি বেঁচে আচে না মরেচে?                                                             

আছে, তবে এখন সে কোথায় সেটা পুলিশ বলতে পারছে না।                                    

কথায় কথা বাড়ে। আলতারানীর দুচোখে ক্রোধের আগুন। –আমি কিচ্ছু জানিনে, আমার মেয়ে যেকানেই থাকুক আমি ওরে ফিরে পেতে চাই। চিল চিৎকারে ছুটে আসে আশেপাশের লোকজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেরী করে না ভজন। প্রশাসন টুকির ব্যাপারে দ্রুত তৎপর হবে আশ্বাস দিলে শান্ত হয় বটে  আলতারানী, কিন্তু চোখে মুখে তখনও এক রাশ ঘৃণা।                            

খেতমজুর মশাই টুডুর কোন ক্যাচ ছিল না, থাকলে বেচারীকে বুকে পাথর বেঁধে জলায় ডুবতে হতো না। সরকারী হোমের বদলে আধপেটা খেয়ে বাঁচলেও ইনু থাকতো বাপের ঘরে। কিন্তু আলতা রানীর নাছোড় জেদ এবং হাই ক্যাচের দৌলতে মাত্র তিন সপ্তাহেই মালতিলতা ওরফে টুকির খবর পেয়ে যায় পুলিশ। লখনউ এর আজমত নগরে এক পতিতালয়ে খোঁজ মেলে টুকির। টুকি অথবা মালতিলতা এই নামে নয়, সেখানে ওর নাম মুসকান। জবরদস্ত কথা বলে হিন্দিতে, বাঙালী বলে মনেই হয় না। সোর্স সাথে নিয়ে ভিন রাজ্যের পুলিশ ওখান থেকে টুকিকে তুলে আনে। মাঝবয়সী কোঠিওয়ালি বাঁধা দেয় না। মুসকান  ওরফে টুকির কানে ফিসফিস করে কিছু বলে, তার পর ছোট একটা কাগজের চিট ওর কামিজের ভেতর গুঁজে দেয়।

এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ভিকটিমকে ট্রান্সফার করার আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা সময় লাগে। পরদিন বিকেলে কলকাতা পুলিশের সাদা পোশাকের এক মহিলা এবং এক পুরুষ কর্মীর সাথে টুকি ফিরছে। ট্রেনের স্লিপার কোচে মহিলা পুলিশ কর্মীর পাশে বসেছে টুকি, প্যাসেজের পাশে কখনো দাঁড়িয়ে এবং বসে টুকির খেয়াল রাখছেন পুরুষ পুলিশ কর্মী। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে, টয়লেটে যেতে চায় টুকি। মহিলা পুলিশ কর্মী ইশারায় সহকর্মী ইন্সপেক্টারের অনুমতি নিয়ে টুকিকে টয়লেটে নিয়ে যান। প্রায় দশ মিনিট পর বেরিয়ে আসে টুকি।                                                     

-মুততে এতক্ষণ লাগে?                                                    

মহিলা পুলিশ কর্মীর কথায় টুকির চোখে মুখে নিষ্পাপ অনুভূতি। নিচু গলায় উত্তর দেয় –ছোটা অউর বড়া, দোনো বাথরুমই কিয়া না।                

নে থাম, অনেক হয়েছে। বহুত খেল দেখিয়েছিস মেয়ে। হিন্দি ছেড়ে এবার জলদি বাংলায় ফিরে আয়।  

মুসকান ওরফে টুকি ওরফে মালতিলতা মুচকি হাসে, মুখে কিছু বলে না। বাইরে ক্রমশ গাঢ় হয় অন্ধকার। হুশ হুশ করে ছোট ছোট স্টেশন পেরিয়ে ছুটছে ট্রেন। কোঠিওয়ালির ফিস ফিসানি টুকির কানে ঘুরপাক খায় –ডরনা মাত মুসকান। হামারা আদমি তুঝ পর বরাবর নজর রাখে গা। বাকি বাত তেরা কামিজকা অন্দর চিরকুট মে লিখা। ফুরসত মিলনে সেই দেখ লেনা।

টয়লেটে গিয়ে বুকের ভেতর থেকে কোঠিওয়ালির দেয়া চিরকুটের লেখা মুসকান বেশ কয়েকবার পড়েছে। তার পর সেটাকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে প্যানের ফোকরে ফেলে দিয়েছে। ট্রেন যাত্রীরা রাতের খাবার খেয়ে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মহিলা পুলিশ কর্মীর দেয়া পাউরুটি কলা মুসকান ওরফে টুকির রাতের খাবার। টয়লেট থেকে ফিরে জুটেছিল এক কাপ চা আর বিস্কুট। খিদেও পেয়েছে খুব, দেরী না করে  গিলে নেয় কলা পাউরুটি। তার পর অপেক্ষা করে কাঙ্খিত  মুহূর্তের জন্য। সময় যেন কিছুতেই কাটে না। দুজন রাইফেল ধারী রেলপুলিশ যাত্রীদের দেখতে দেখতে এগিয়ে যায়। “পানি বোতল পানি, দশ রুপয়া পানি। পানি বোতল….” জল বিক্রেতা হকার নিচু গলায় উপস্থিতি জানান দেয়। এবার টুকি কিছুটা চঞ্চল। মহিলা পুলিশ কর্মীর সাথে নীচের বার্থে  শুয়ে ছিল, এবার উঠে বসে। বুকের ধুকপুকানি ক্রমশ  বাড়তে থাকে। চিরকুটের লেখা অনুযায়ী পানি বোতলের পরেই আসার কথা ঠান্ডা পানি বিক্রেতার বেশে কোঠিওয়ালির খাস আদমির। টুকি ওরফে মুসকানের পিঞ্জরা থেকে পালানোর চাবিকাঠি সেই লোকের হাতে। কিন্তু কোথায় কে? রাইফেল ধারী দুজন রেলপুলিশ পিছনের কামড়া ঘুরে ফিরে আসে। কিছুক্ষণ নজরদারী চালিয়ে তার পর সামনের কামড়ার দিকে এগিয়ে যায়। ট্রেনের গতি শ্লথ হতে থাকে। দূর থেকে হাঁক শোনা যায় “পানি… ঠান্ডা পানি, লিমকা বোতল….ঠান্ডা  পানি…। চোখের পলক পরে না মুসকানের। জোয়ান মর্দা ছেলে্টা ঠান্ডা পানীয়ের বোতল হাতে ওর সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেই উঠে দাঁড়ায় মুসকান। ঘুম চোখে পুলিশ মহিলা জিজ্ঞাসা করে –এই মেয়ে উঠলি কেন তুই? টুকি ওরফে মুসকান ফিস ফিসিয়ে জবাব দেয় -নাম্বার ওয়ান করতে টয়লেট যাব চাচী।

“বেচাল করবি না কিন্তু, সামনে বোধহয় কোন স্টেশন আসছে। জলদি জলদি ফিরবি। ট্রেন স্টেশনে  ঢোকার আগে না যদি আসিস.…”। কথা অসমাপ্ত রেখেই ঘুমের দেশে পৌঁছে যান মহিলা পুলিশ কর্মী। এক পা দু পা করে এগোতে থাকে টুকি। কয়েকজন প্যাসেঞ্জার বাক্স প্যাটরা হাতে স্টেশনে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। স্টেশনের প্রায় কাছে আসায় ট্রেন এগোছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। হঠাৎই বাথরুমের কাছ থেকে ভেসে আসে মৃদু গুঞ্জন। সেই গুঞ্জন ক্রমশ কোলাহলে রূপ নেয়। হৈ চৈ শুনে আপার বার্থ থেকে লাফিয়ে নীচে নামেন কলকাতা পুলিশের ইন্সপেকটার। মহিলা সহকর্মীর পাশে টুকিকে দেখতে না পেয়ে বিচলিত হয়ে ছুটে যান সেখানে। বাথরুমের দড়জার পাশে ভীড়ের মাঝে আধা শোয়া অবস্থায় টুকি ওরফে মালতিলতা ওরফে মুসকান জীবনের শেষ ঘুমে। পাশে পরে আছে পানীয়ের খালি বোতল।



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন