জলধি / গল্প / তৈমুর খানের দুটি অণুগল্প
Share:
তৈমুর খানের দুটি অণুগল্প

শুঁয়োপোকা

কী করে একটা শুঁয়োপোকা জামার ভিতরে ঢুকে গেছে বুঝতে পারিনি। থেকে থেকে শিরশির করছে, হাত দিয়ে চাপতে গেলে তার গায়ের সূক্ষ্ম রোমগুলো বিঁধে যাচ্ছে আর ভীষণ চুলকাচ্ছে। কিন্তু জামার ভিতরে চুলকাতেও পারছি না। সকলের মতো আমিও আমন্ত্রিত অতিথি। নারী-পুরুষ একসঙ্গেই বসে আছি টেবিলের পাশাপাশি।

বহুদিন পর উমেশার সঙ্গে দেখা। হ্যাঁ যে উমেশা এক কথায় আমার বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল। বলেছিল: আপনাদের মতন পুরুষরা সুন্দরী নারী দেখলেই বেলেল্লাপনা করেন। পথে-ঘাটে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন।

উমেশা এমন কথা বলবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি সেদিন। সে ছিল আমার এক ছাত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়া। খুব যে অপরিচিতা তাও নয়। সেই অপমানকে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেছিলাম। আজ সে ও তার স্বামী মিস্টার শাজাহানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে এই অনুষ্ঠানে। শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছে: কেমন আছেন?

আমি থতমত খেয়ে তার কথার উত্তর দিতে পারিনি। একবার মাথা নেড়ে বলতে চেয়েছি 'ভালো আছি'। তারপর আমাকে ইঙ্গিত করেই তার স্বামীর কানে কানে কী যেন সব বলছে বারবার। আমার কান দুটো ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাচ্ছে আর এক ধরনের শাঁ শাঁ শব্দ করছে একটানা।

খেতে বসে অস্বস্তি বেড়ে গেছে। এত খাবারের আয়োজন, তবু কিছুই রুচি হচ্ছে না। সবকিছু কেমন যেন বিস্বাদ লাগছে। এদিকে শুঁয়োপোকাটা মনে হচ্ছে এবার আমার ঘাড়ের কাছে উঠে এসেছে। কিছুতেই জামাটা খুলে ফেলতে পারছি না। উমেশা এক-একবার জোরে হেসে উঠছে।

শুঁয়োপোকাটা মেরে ফেলতে পারলে কিছুটা শান্তি পাওয়া যেত।


 ফাঁদ

দুয়ার বন্ধ করছো কেন? এই মাত্র এলাম, আমার কথাটা আগে শোনো!

 আজ আর কোনো কথা শোনার সময় নেই। সব কথা শেষ হয়ে গেছে।

 তাহলে আমাকে চলে যেতে দাও। আমি আর এখানে কোনোদিন আসবো না।

 আজ আর যাবার কোনো পথ নেই। সব আয়োজন হয়ে গেছে। এখনই টের পাবেন।

 কী আয়োজন কিছুই বুঝতে পারছি না। একটা লাল রেস্কিন পেপারে বাঁধাই করা মোটা  খাতা নিয়ে দুজন লোক ঘরে প্রবেশ করলেন। খাতা খুলে কলম খানা এগিয়ে দিয়ে আমাকে বললেন: সই করুন!

 কীসের সই?

 এইতো সব লেখা আছে পড়ে দেখে নিন!

পড়তে পড়তে মাথা গরম হয়ে গেল। মনে হলো এখনই সব ছিঁড়ে ফেলি। কিন্তু কে যেন দুই পাশ থেকে আমার দুই হাত ধরে ফেলল।

কানের পাশে কী একটা ঠাণ্ডা স্পর্শ অনুভব করলাম। পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে আরজিনা খাতুন। হ্যাঁ আরজিনা-ই তো!

এখানে চাকরি করতে এসে বছর তিনেক তাদের বাড়িতে আছি ভাড়াটিয়া হিসেবে। আরজিনা যখন-তখন কাছে এসে বসেছে। যেটা ও বুঝতে পারেনি, সেটা বুঝিয়ে নিয়ে গেছে। আমার বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে সেদিনই ওকে কথায় কথায় বলে ফেলেছিলাম। আজ কি তারই প্রতিদান!

দুজন তাড়া দিয়ে বললেন: নিন আর ছলনা করবেন না!সইটা করে দিন!



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন