জলধি / গল্প / জলছবি
Share:
জলছবি
এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে খানিক আগে। রবীন্দ্রসদন, শিশিরমঞ্চ আর নন্দন চত্বর ভিড়ে ঠাসা।ফেস্টিভ্যালের চেক ছবি “ফাদার্স অ্যাফেয়ার্স” দেখে কফি শপে বসে আছে প্রতীক গুহ। সাড়ে ছ’টায় সেমিনার কভার করে জেপির আসার কথা। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত শর্টফর্মে জেপি, প্রতীকের পুরনো বন্ধু। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল  কভার করতে কলকাতায় এসেছে।  গত পরশু প্রতীক গুহ'র ব্রাঞ্চে হঠাৎ হাজির হয় জ্যোতিপ্রকাশ। অনেকদিন পর সাক্ষাৎ হলেও ব্যস্ততার জন্য বিশেষ কথা হয় নি। তবে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কমপ্লিমেন্টারী কার্ডটা প্রতীক কে তখনই দিয়ে যায় জ্যোতিপ্রকাশ।
এমনিতে সিনেমা দেখার সময় হয়না প্রতীকের, সিনিয়র ব্রাঞ্চ ম্যানেজার বলে কথা। তবে আজ অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক স্ট্রাইক থাকায় ছবিটা দেখেছে প্রতীক।
সংসারের গন্ডীতে বাঁধা পড়েনি জ্যোতিপ্রকাশ।বিগত শতাব্দীর সাতের দশকে এমারজেন্সীর সময় নিছক সন্দেহের বশেই পুলিশ জ্যোতিপ্রকাশকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়।তারপর অনেক ঘটনা, সবটা প্রতীকের জানা নেই।চাকরি সূত্রে দীর্ঘদিন প্রতীককে কলকাতার বাইরে থাকতে হয়। পরিচিত বন্ধু- বান্ধব মারফৎ কালেভদ্রে যোগাযোগ হোত। সেই সূত্রে জেপির খবরাখবর রাখতো প্রতীক। লেখালিখি আর ফটগ্রাফিতে খুব নাম করেছে জেপি, বিদেশেও যায় মাঝেমধ্যে। কাজের প্রয়োজনে দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদেই বেশি থাকে।
বছর চারেক আগে অফিসের কাজে দিল্লি গিয়েছিল প্রতীক। ফেরার সময় কনট্যাক্ট হয় জেপির সাথে। প্রাণ খুলে কথা না হলেও নতুন করে যোগাযোগ শুরু তখন থেকেই।

-কতক্ষণ বসে আছিস! প্রতীকের কাঁধে আলতো ছোঁয়া দেয় জেপি।
-এই তো শো শেষ হবার পর, তা মিনিট কুড়ি হ’ল।দাঁড়িয়ে কেন বোস না।
-না এখানে নয়, চল অন্য কোথাও একটু রিল্যাক্স করি।
-তাহলে আমার ফ্ল্যাটে চল দুজনে জমিয়ে আড্ডা হবে। মিসেস দুদিনের জন্য মেয়েকে নিয়ে বারাসত গিয়েছে শাশুড়ি-মাকে দেখতে।
কফিশপ থেকে বের হয়ে জেপিকে নিয়ে ট্যাক্সিতে ওঠে প্রতীক গুহ।
-তোর ছেলে এখন কি করছে প্রতীক?
-কে বাবুসোনা? ও এখন পুনেতে। এম বি এ পড়ছে।
-ছবিটা তোর কেমন লাগলো?
-অপূর্ব। আসলে বাইরের ছবি তো দেখা হয়ে ওঠে না। দারুণ ফটোগ্রাফি।
-ফিল্মটা এক ইনফারটাইল হাজব্যান্ডকে নিয়ে তাই না?
-হ্যাঁ, দারুণ অ্যাক্টিং।
-রাত্তিরটা আমার এখানে থাকবি তো বল রান্নার মাসি এতক্ষণে চলে এসেছে। স্পেশাল কিছু আইটেম  বানাতে বলে দিতাম।
মিনিট দশেকের মধ্যেই আলিপুর জজ কোর্টের পিছনে “ড্যাফোডিল” কমপ্লেক্সের গেটে পৌঁছে যায় ট্যাক্সি। লিফটে ওঠার আগে বাইরে থেকে স্ন্যাকস জাতীয় কিছু খাবার আনতে সিকিউরিটি ছেলেটির হাতে কিছু টাকা দেয় প্রতীক।
-তুই রাতে থাকছিস তো?
-না মানে দিদিকে একটা ফোন করতে হবে তাহলে। কলকাতায় এলে দিদির কাছেই থাকি তো।
-সুমিত্রাদি কলকাতায় থাকেন বুঝি!
-হ্যাঁ আমাদের বাড়িতেই থাকে। মিশনারী একটা স্কুলে পড়াচ্ছে।

মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে দেয় প্রতীক। রান্নার মাসি রাতের খাবার আয়োজন করতে ব্যস্ত। ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপ নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে প্রতীক আর জ্যোতিপ্রকাশ। স্পেশাল কোন আইটেম বানাতে হবে কিনা জানতে চায় রান্নার মাসি।
-জেপি ভেজ না ননভেজ কি খাবি বল, মাসি সেই মতো করবে।
-একটা হলেই হয়, অসুবিধা না হলে দু চারটে হাতরুটি হলে মন্দ হয় না।
-তুই অতটা ফরম্যাল হচ্ছিস কেন বলতো? রাইস রুটি যা দরকার মাসি করবে, নো প্রবলেম। মাসি তুমি আজ না হয় রুটিই করো, সঙ্গে পনীর আর চিকেনের আলাদা আলাদা প্রিপারেশন।
জ্যোতিপ্রকাশ নিজের কাগজ-পত্র  গুছিয়ে নিয়ে দিদিকে ফোনে জানিয়ে দেয়  রাতে ফিরবে না।চেয়ারটাকে আরও কাছে টেনে একেবারে বন্ধুর মুখোমুখি বসে প্রতীক।
-আজ কিন্তু তোকে ছাড়ছি না। আগেরবার খুব শর্ট টাইম দেখা হয়েছিল। অনুরাধার সঙ্গে তোর ডিটাচমেন্ট কেন হ’ল তা আমার আজও জানা হয়নি। চিঠিতে তুই এই ব্যাপারটা জানাতেও চাস নি।
রান্নার মাসি বাইরে থেকে আনা স্ন্যাকস প্লেটে সাজিয়ে রেখে যায়। প্রতীক ফ্রিজ থেকে সোডা, আইস্ কিউব নিয়ে ড্রিংকস রেডি করে। কিছু সময় চুপ থেকে কথা শুরু করে জ্যতিপ্রকাশ -কি হবে ওসব নিয়ে প্রতীক। তুই তো জানিস ইউনিভার্সিটিতে পড়ার শেষ সময়টা আমাদের কেমন সব তালগোল পাকিয়ে গেল!সেভেন্টিফাইভে এমারজেন্সী ডিক্লেয়ার হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বাবা চলে গেলেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই বাড়ির পার্টিশন নিয়ে কাকাদের চাপ শুরু হ’ল। পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে দুদন্ড নিরিবিলিতে বসে কথা বলার সুযোগ নেই।চারদিকে একটা দমবন্ধ পরিবেশ। এমারজেন্সীর ভয়ে সবার মুখে কুলুপ আঁটা। বাসে ট্রামে  পর্যন্ত কথা নেই। এদিকে যাদের ওপর ভরসা করতে পারতাম তারা সবাই এলাকা ছাড়া। উফ্ সে সব ভাবলে  শরীর এখনও ঝিমঝিম করে। বোগাস সিচুয়েশন। বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হলেও ক্যারিয়ার নষ্ট হবার ভয়ে ডিরেক্ট পলিটিকসে ইনভলব্ হতে চাইনি। কিন্তু নন পলিটিক্যাল ইমেজ ধরে রেখেও তো লাভ হ’ল না। শেষমেশ সেই তো পলিটিক্যাল আসামী হয়ে গেলাম।
ড্রিংক হাতে নিয়ে সোফায় আরাম করে বসে জ্যোতিপ্রকাশ। স্ন্যাকসের প্লেটটা এগিয়ে দেয় প্রতীককে। যুবক বয়সে জ্যোতিপ্রকাশের চেহারাটা ছিল বেশ আকর্ষণীয়। লম্বা  শরীর পেটানো স্বাস্থ্য তার ওপর চার্মিং ফেস। যে কোন মেয়ের প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে একদম আইডিয়াল। ক্লাশে পড়াশুনার ফাঁকেই অনুরাধার সঙ্গে ঘনিষ্টতা। তারপর কফিহাউস, সিনেমা দেখা। বেশ ভালোই চলছিল। অবশেষে কাল হল এমারজেন্সী। নাইন্টিন সেভেন্টি সিক্সের আগষ্ট মাস। বহরমপুর পিসির বাড়ি থেকে রাতের বাসে কলকাতা ফিরছিল জ্যোতিপ্রকাশ। কৃষ্ণনগরে মাঝরাতে বাস থামিয়ে হঠাৎ পুলিশের তল্লাশি। সাদা পোশাকের পুলিশ ছাড়াও উর্দিধারী পুলিশও ছিল ভেতরে বাইরে। কিছু বোঝার আগেই জ্যোতিপ্রকাশকে নামিয়ে সোজা ভ্যানে তুলে নেয়। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার কাজে পুলিশ তখন সিদ্ধহস্ত, তার ওপর উপরি পাওনা এমারজেন্সী। বিচার নেই, মামলা করার সুযোগও বন্ধ। জ্যোতিপ্রকাশের ঠাঁই হলো গরাদের ওপার।
দুজনেই ড্রিংকস শেষ করে টেবিলে গ্লাস রাখে।কিভাবে শুরু করবে ভাবছে জ্যোতিপ্রকাশ। প্রতীক বরাবরের ভালো বন্ধু। জেলে থাকাকালীন বাইরে থেকে যতটা সম্ভব ওই করেছিল। সুযোগ বুঝে ল-ইয়ার  কনট্যাকট করা থেকে অনুরাধাকে ফিডব্যাক দেওয়া, সবটাই করতো প্রতীক।
রান্নার মাসি রাতের খাবার ডাইনিং টেবিলে ঢেকে রেখে চলে যায়। নতুন করে ড্রিংকস সাজায় প্রতীক।
-মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড মাসি চলে গিয়েছে এবার বল প্লিজ।
-ঠিক দেড় বছরের মাথায় ছাড়া পেলাম। আমার পৃথিবী তখন বিবর্ণ, ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম অনুরাধা ওর মামাদের কাছে রয়েছে।
-তারপর
-আমি চেষ্টা করি যোগাযোগ করতে। কারণ ওকে সবটা বলা দরকার। দেরি না করেই ওকে সবটা জানানো দরকার।
-কিসের দেরি জেপি! মেক ইট ক্লিয়ার মাই ফ্রেন্ড।
-প্রথম দিকে আমি খুব একটা আমল দিইনি।ভেবেছিলাম জেলের বাইরে বের হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আশ্চর্য! কি ঠিক হয়ে যাবে, তুই তো আমায় কিছু জানাস নি!
-ম্যাটারটা তোকে বলার সুযোগ হ’ল কোথায় বল।আমি জেল থেকে বেরোলাম, আর তুই কলকাতা ছাড়লি। হায়দ্রাবাদে ট্রেনিং নিতে চলে গেলি, মনে নেই?
-সেভেন্টি এইটের ফেব্রুয়ারীতে হায়দ্রাবাদে আমাদের ট্রেনিং নিতে যেতে হ’ল। সায় দেয় প্রতীক।
-তুই তো জানিস, অ্যারেস্ট করার পর প্রথমে ব্যাঙ্ক ডাকাতির কেস দিয়ে শুরু হ’ল। তারপর একটা মার্ডার কেস সঙ্গে আরও দুটো পলিটিক্যাল কেস জুড়ে দিল। পুলিশ কাস্টডিতে রেখে এমন টরচার করেছিল  যে আমার কখন ইউরিন হয়ে যেত বুঝতে পারতাম না। বেশ কিছুদিন জেল হাসপাতালে ছিলাম। লোয়ার পোরশান টা সব সময় কেমন যেন অসাড় হয়ে থাকতো। ইউরিনের প্রবলেমটা একই রকম।
পেনড্রাইভে বাজতে থাকা মিউজিকটা খানিক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাইরের রাস্তায় গড়ি চলাচল কমে এসেছে। এদিকটা শহরের কোলাহল থেকে অনেকটাই মুক্ত। নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে বেজে ওঠে প্রতীকের মোবাইল।
-জাস্ট আ মিনিটস জেপি।
-হ্যাঁ বলো – না ফ্ল্যাটেই আছি।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে প্রতীক বেডরুমে চলে যায়। জ্যোতিপ্রকাশ সোফা ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সেকেন্ড হুগলী ব্রিজের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায় তাকিয়ে থাকে।
সরি জেপি, মিসেস ফোন করেছিল। তুই এসেছিস শুনে খুশী হ’ল। আসলে তোর কথা বলেছি তো অনেক। হ্যাঁ  বল, তোর প্রবলেম যেটা বলছিলি প্লিজ কন্টিনিউ জেপি।
-বাইরে বেরিয়ে অনুরাধার সঙ্গে ওর মামাবাড়ি লেকটাউনে যোগাযোগ হ’ল। সেদিন ঘরোয়া পরি বেশ, কীভাবে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারিনি।
পরে এক শনিবার গোর্কি সদনে মিট করলাম। সবটাই বললাম ওকে, যতটা ডিটেলে করা সম্ভব।পুলিশের পিটুনি থেকে সবরকম টরচার। লোয়ার পোরশন অসাড় হবার ব্যাপারটাও বললাম। পরের সপ্তাহেই একজন ইউরোলজিস্টকে দেখানোর ব্যবস্থা করে অনুরাধা।
-তারপর কি হ’ল! ডাক্তার কি বললেন?
-নানা রকম প্রশ্ন অনুরাধার সামনেই। শুধু ফিজিক্যাল কিছু পরীক্ষার সময় অনুরাধা বাইরে চলে যায়।
-তারপর
-যা হয় আর কি। নানারকম টেস্ট, এক্সরে আর সোনোগ্রাফি করার পর ফাইনালি মেজর অপারেশন। ডাক্তাররা বলেছিলেন –সেনসেটিভ অরগ্যান, চান্স ফিফটি ফিফটি। বাড়ি ফিারে মাস দেড়েক ক্যাথিটার আর ইউরিন ব্যাগ নিয়ে থাকতে হ’ল। আস্তে আস্তে ইউরিনে প্রবলেমটা ঠিক হ্য়ে গেল  তবে …
-তবে কি জেপি!
-আমি চিরদিনের জন্য সেক্সচুয়ালি হ্যান্ডিকেপড হয়ে গেলাম।
-মাই গড! বাট হাউ?
-দ্যাট ইজ সিম্পলি বিকজ অফ দ্য টরচার আই হ্যাড টু সাফার ইন দ্য পুলিশ কাস্টডি মাই ফ্রেন্ড।  
-হোয়াটস রং! তুই এসব কথা আমাকে আগে জানাস নি কেন জেপি?
-জানাইনি ঠিকই, তবে লাভ কি হতো বলতো?
-কি হতো মানে? গর্ভমেন্টের এগেইন্সটে কেস করা যেত। অ্যাটলিস্ট ক্ষতিপূরণের দাবী তো করা যেত?
-অনুরাধা অনেকটা এগিয়েছিল জানিস প্রতীক।ওর এক বান্ধবীর রেফারেন্সে রাজ্য সরকারের পাবলিক রিলেশন ডিপার্টমেন্টে একটা  চাকরির সুপারিশও হয়েছিল। কিন্তু আমি রাজী হইনি।জীবনের স্বপ্নটা তো আমার অন্যরকম ছিল। বরাবরের স্বাধীনচেতা মানসিকতায় নিজেকে গড়ে তুলেছিলাম আমি।
-তারপর কি হ’ল জেপি?
-এর মধ্যেই দিদির সাথে প্রণবেশদার রিলেশনটা বিটার হতে থাকে।
-সুমিত্রাদির কথা বলছিস!
হ্যাঁ, টাটা কোম্পানীতে চাকরির সূত্রেই বাবার এক বন্ধু মারফৎ প্রণবেশদার সঙ্গে দিদির বিয়ে হয়েছিল। প্রণবেশদা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, নিজের ব্যবসা। ব্যবসার কাজে প্রায়ই বাইরে যাওয়া আসা ছিল নিয়মিত। প্রথম দিকে দিদি বুঝতে পারেনি। পরে জানতে পারে যে প্রণবেশদার অন্য একটা রিলেশন আছে। দিদি ডিভোর্সে রাজী হয়ে যায়।
-মেসোমশাই তো আগেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন, আর মাসীমা?
-বাবা চলে যাবার পর আমি অ্যারেস্ট হলাম। তারপর জেল থেকে ছাড়া পাবার পর দিদির ঘটনা।মা ভীষণই ফ্রাসটেটেড হয়ে পড়েছিল। তারপর কিছুটা একাকীত্বের জ্বালা ছিল। মা সুইসাইড করে, গায়ে আগুন দিয়ে। 
-ওহ্ ভেরি স্যাড! তোর চিঠিতে জেনেছিলাম মাসীমা নেই, তবে সুইসাইড তুই বলিস নি। ভেরি স্যাড, ভেরি ভেরি স্যাড জেপি।
-স্যাডনেস ওয়াজ দ্য অনলি ফ্রেন্ড অব মাইন ইন দোজ ডেজ –তবুও  আমি কিন্তু হারিয়ে যাইনি, পালিয়ে যাইনি প্রতীক।
-তুই তো পালিয়ে যেতে শিখিসনি জেপি। আর সত্যি  বলতে কি পালিয়ে তুই যাবি কোথায়?
-কথাটা ঠিক বলেছিস। অনুরাধাও তাই বলতো। আজ আমি যা করছি তার পিছনে রয়েছে অনুরাধা। ওর সাপোর্ট না পেলে লেখালিখি, ফটোগ্রাফি এসব অসম্ভব ছিল। বিয়ের পরেও দেদার টাকা পয়সা দিয়েছে।
-অনুরাধা এখন কোথায় আছে?
-আমদাবাদ। ওর হাজব্যান্ড আর্কিটেক্ট। দুই ছেলে, অসম্ভব মেধাবী। অনুরাধা নিজে একটা এন.জি.ওতে অ্যাটাচড।
-তোর সাথে কনট্যাক্ট আছে?
-আছে। আমি দুবার ঘুরে এসেছি ওর আমদাবাদের বাড়ি থেকে। ওর হাজব্যান্ড আমাদের রিলেশনটা জানে। অনুরাধা বিয়ে করতে চায়নি জানিস প্রতীক। বলেছিল একসঙ্গে থাকবো।  আমি রাজী হয়নি। শুধু শুধু একটা জীবন নষ্ট করার তো মানে হয়না, তাই না?
সিগারেট কেস থেকে সিগারেট ধরিয়ে জ্যোতিপ্রকাশ জানালার কাছে দাঁড়ায়।জ্যোতিপ্রকাশের জীবনের এই অধ্যায় এতটা বেদনার তা কোনদিন কল্পনাই করতে পারেনি প্রতীক। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা পুরুষ  চরিত্রটি ইনফারটাইল শারীরিক জটিলতার জন্য কিন্তু জ্যোতিপ্রকাশের কারণ তো তা নয়। সোফা থেকে উঠে প্রতীক দাঁড়ায় জ্যোতিপ্রকাশের পাশে। সেকেন্ড হুগলী ব্রিজের আলোগুলো ক্রমশ ঝাপসা হতে থাকে। জ্যোতিপ্রকাশের কাঁধে হাত রাখে প্রতীক। দু’ফোঁটা অশ্রু কী ওর চোখের পাতা ভিজিয়ে দিল?  


অলংকরণঃ তাইফ আদনান