জলধি / কবিতা / সুমন শামসুদ্দিনের তিনটি কবিতা
Share:
সুমন শামসুদ্দিনের তিনটি কবিতা
অনির্দিষ্ট ইচ্ছা

একদিন আমি নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যাবো;

গাছের ডালে বসে দেখবো উদয়-অস্ত!

পাতার ফাঁকে স্বপ্ন হয়ে হাওয়া খাবো;

অমাবস্যার অন্ধকারে হবো ত্রস্ত।

 

মেঘবিছানায় শুয়ে দেখবো মানবযুদ্ধ;

হাসবো দেখে দিগবলয়ে পাখির খেলা!

ঘাসের ডগায় শিশির মেখে হবো শুদ্ধ;

দিবানিশির রূপান্তরে কাটবে বেলা।

 

গ্রহ হয়ে একদিন আমি ঝুলে থাকবো-

আকাশ থেকে দেখবো সকল প্রাণের দোলা!

সবুজ-প্রাণের মিলনতিথির ছবি আঁকবো;

পুষ্পমুকুল দৃষ্টে হবো আত্মভোলা।

 

আলবাট্রসের পাখায় চড়ে ভাসবো অতল;

সপ্তসাগর পাড়ি দিয়ে অন্তলয়ে।

কোরালদ্বীপের গুচ্ছ-আবাস তরঙ্গজল,

রাখবো দৃষ্টি নগর-জীবন প্রাণ-প্রলয়ে।


দহতরণী

উদাত্ত আকাশে স্থির তাকিয়ে থাকি নিঝুমরাতে

স্থৈতিক কষ্ট নিগূঢ়গৃহে বসে নীরবে হাসে!

পেঁজাতুলোর মতো বিচলিত নীরদ গগনপাতে;

রাগাশ্রয়ী ধ্বনি গীতিহীন গহিনে দুচোখে ভাসে!

 

অতল হিমেল প্রাণে সুপ্ত ছিল এক দুঃখনদী,

জীবন অভিঘাতে অহোরাত্রি কাঁদে দারুণ ক্লেশে!

দুরূহ প্রেমবীণা রহস্যচক্রে অন্ধপদী-

অহর্নিশি আমি তলিয়ে যেতে থাকি বিষম শ্লেষে!

 

স্মৃতিপ্রতিবিম্বে অনুচিন্তাগুলো অসবর্ণ

প্রকট অবহেলা বর্ণহীন করে চিত্তাকাশ;

মহানিশা দেহের অষ্টাঙ্গচুমে মৃতপর্ণ

প্রেমহীন সত্তা চিত্রপটে আঁকা মধ্যাকাশ!

 

প্রাণবন্তরসে অধ্যুষিত ছিলো উপজীবিকা

পড়ন্তবেলাতে স্মৃতির দর্পণে ভাসে নিয়তি;

তারুণ্যতাড়নে মুহুর্মুহু ভুলে ভাঙে বীথিকা

নিমীলিত অদূরে ক্ষীণালোকে হারায় বঁধুপ্রিয়তি!

 

আজ বিষণ্ণতা একান্ত আপন মনহরণী!

বিধুরবসতির নিরন্তরপথে- দহতরণী!


বিথোভেন সন্ধ্যা

আজ আমার চপিন-সন্ধ্যা,

পিয়ানো টিউনে, সি মাইনরে,

চোখ বন্ধ করে চপিন শুনছি।

 

গত বর্ষায় ঠিক সময়ে,

বিথোভেন-এর ফার এলিস ছিল,

রাতভর জোছনা-সারথি।

তারপর তুমি সাড়া দিলে ভুল বাতাসে,

ফার এলিসও বিরহ বাঁশির গলায়,

বিধুরতার কণ্ঠাভরণ পরালো!

 

তারপর, আহত ময়ূর আর মেলেনি পেখম,

নিরাভরণ রাত ভুলেছে মোযার্ট কিংবা ভিভালদি!

চেরি ব্লোসম আর ফিরলো না কোনো এপ্রিলে!

 

এখনো আমি ফার এলিসের অপেক্ষায় আছি!

দূর থেকে যদি ভেসে আসো কখনো-

তোমার দুচোখেই হবে আবার-

বিথোভেন সন্ধ্যা!



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন