জলধি / কবিতা / রবীন বসুর তিনটি কবিতা
Share:
রবীন বসুর তিনটি কবিতা
আমাদের মাধুকরী

তীব্র শিস ছুটে এলো ধমনী ছিঁড়ে

প্রবাহ প্রদাহ দ্যাখে আক্ষরিক ক্ষত

গভীরে প্রোথিত সুপ্ত শিকড়ের বীজ

অতিক্রম তাকে রাখে নবতর গান।

 

মূর্ছনা সংগীত নয়, যাপনের লেখা

চর্যাপদ ভেদ করে 'চোরাশি সিদ্ধা'

কাহ্নপাদ শবরপাদ আর নৈমিত্তিক

এই যত গূঢ়াচার গোপন সংকেত

 

ভবিতব্য প্রতিলিপি বর্ণালেপ আঁকে;

 

সভ্যতার ক্ষীণ কটি সুচারু বিন্যাস

সময়বাহিত হয় উড়ান অধীর

প্রতি খাঁজে জল জমে, সঞ্চিত জীবন

আমাদের মাধুকরী ভিক্ষালব্ধ ধন।


ফিনিক্স নারী

চলে আসার সময় তুমি শুধু বলেছিলে, 'ভুলে যেও'

মাঠের নাড়ায় উঠেছিল ঢেউ

শুকনো গাছের মাথায় নিঃসঙ্গ কাক

আমি ইচ্ছে করেই চোখ সরিয়ে এইসব দেখছিলাম

আর একবারও তোমার মুখের দিকে না তাকিয়ে

চলে এসেছিলাম হনহনিয়ে।

সেটা কি আমার রাগ ছিল? অসভ্যতা? না, 

মনখারাপের খয়াটে ইস্তাহার!

তারপর, সারাজীবন 'ভুলে গেছি' 'ভুলে গেছি' ভেবে

ধুলোপায়ে হেঁটেছি কত! স্বপ্নে সাঁতারে অবশিষ্ট

নেই কিছু ; সাফ হয়ে গেছে স্মৃতি... অমলিন দিশা

ভেবে ভেবে নিজের ভিতরেই কাঁদি, ককিয়ে উঠি

দহনে দগ্ধ হই প্রতিদিন। তবু সেই ভস্মশেষ থেকে

পুনরায় জেগে ওঠে তোমার মুখ, ফিনিক্স নারী!

নতজানু আমি স্বীকার করছি, এই বেলাশেষেও

ভুলে যেতে পারিনি আজও…


নিঃস্ব হচ্ছে বেলা

তোমাকে গড়িনি আমি, আমাকেও নয়

হাতের ছেনির ঘাত হয়তো নির্ভুল

তবুও সময় ভাঙা, নির্মম উন্মূল

ভাঙলে পাথর শুধু শিল্প কথা কয়!

 

তাহাকে গড়িনি আমি, অন্য রূপ পাই

রাত্রিজাগা অভিসার অপেক্ষায় পথ

সময় তাড়িয়ে এল অন্ধকার রথ

সভ্যতার কারিগরি সৃষ্টিসুখ চাই।

 

বিমূর্ত নির্মাণে দেখি জ্বলে ওঠে আলো

ভাস্কর্য-বিদ্যুৎ মেখে শুয়ে আছে কাল

ফসলের অগ্নিবর্ণ কৃষকের ভাল

দুঃখ খুঁটে জন্ম দেয় অভাবের কালো।

 

আবহমান ভেসে ওঠে, চলে এই খেলা

ক্রমাগত ভগ্নপ্রায়, নিঃস্ব হচ্ছে বেলা।



অলংকরণঃ তাইফ আদনান