জলধি / কবিতা / যুবক অনার্যের তিনটি কবিতা
Share:
যুবক অনার্যের তিনটি কবিতা
পরিকীর্ণ পানশালা 
 
তুমি চলে গেছো, অপেক্ষার পারদ
 জমেছে  বুকে,
বুক থেকে লোহিতকণিকা টেনে
সিথানে রেখেছো তোমার;
তুমি বিস্মৃত তাম্রলিপি- হৃদয়ে বুনে
অক্ষরের অভিশাপ
এ কবিকে করেছো ঋণী- চিরদিন।
না মানার অভিযোগে দেয়ালে 
দিয়েছে সেঁটে পোস্টার এ রাষ্ট্র 
বিরুদ্ধে আমার, নিমজ্জিত দ্রোহময় 
এই একা আমি;
একা একা অচল মুদ্রার মতো নিস্প্রয়োজন
এ রাষ্ট্রের কাছে 
কেবলি করেছি উচ্চারণ  
ভেঙে ফেলতে লাল গালিচার
জনতাবিরোধী আয়োজন 
তাই তোমার কাছেও যে আমি 
ফেলে দেয়া কমলার  খোসা
আমাকে গ্রহন  করে নি 
কেনো রাজা, কোনো রাণী
যেহেতু জেনে গেছে আমি 
সুউচ্চ পোশাকের রঙ জ্বালিয়ে দিতে জানি ক্ষারে,
আমি- শাসিতের জীর্ণ দাগের কাছে 
আরও এক বিদীর্ণ দাগ শুধু।
মানুষের সুখ আজ অসুখের ভিড়ে নতজানু 
মানুষের দুঃখ আজ ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার পটে আঁকা শিশুদের শব, এরকম কেনো আজ দ্রবীভূত ক্ষুধা 
কেনো তবে তীরন্দাজ নিজেই বিদ্ধ হলো 
তবে কি নিজেরই ভুলে!
মাধবীও শরীর বিলিয়ে কতিপয় মাথামোটা 
শিল্পহীন সুধীদের কাছে 
বড়ো বেশি উজ্জ্বল হলো
লোকালয়ে বিবিধ ঢেউয়ে-জিনে।
আজও যে সংশপ্তক- আমারই  মতন -ঐতিহ্যে- আসামী হয় বুকপকেটে সন্ন্যাস রেখে।
 
তুমি ফিরে যদি বা আসো না আসার মত 
কুটনৈতিক ছলে - সে তোমার ধৃষ্ট ধৃষ্ট ব্রতাচার নয়! - যেরকম এ রাষ্ট্র 
বিছিয়ে রেখেছে জনতাকে জনহীন ক'রে;
শুধু এক দন্ডাজ্ঞা আমার হয়ে আছে
জন্মসুত্র ধরে যে-জন্ম আমাকে
দাঁড় করিয়েছে শ্বাপদচিহ্নের তীরে
যেখানে  প্রগলভ হতাশার বিলাসিতা নেই,
নেই স্বপ্নঘাতী কুহেলিকা।
এখনও আছো তুমি চলে গিয়ে,
প্রতিবার যতটা পোড়ানো যায়
পুড়িয়ে আমাকে ধ্বস্ত করেছো ভালোবাসা
আর আমাকে করেছো ঋণী চিরদিন
যে-আমি অবাধ্য জন্ম নিয়ে ফিরে আসি
এ বাংলায় সহস্রবার 
পরিকীর্ণ পানশালার মতো উৎকীর্ণ- ধীরে।

তোমাকে ছোঁবো না
 
তোমাকে ছোঁবো না ছুঁয়ে দেবো শূন্যতা তোমার
যেভাবে বৃক্ষ ছুঁয়ে দেয় বাতাসে ভেসে থাকা কার্নিশ 
সড়কের মাঝখানে রোদ্দুর ছুঁয়ে থাকে 
পথিকের ব্যাস্ত পারাপার 
তোমাকে ছোবো না ছুঁয়ে দেবো কলংক তোমার
হবো যুধিষ্ঠির 
পাশা খেলে রাজ্য হারাবো - বিজয় উল্লাসে কৌরব উল্লসিত হলে হোক
তবু ছোঁবো না তোমাকে 
তোমার না ছোঁয়া নিরীশ্বর হাত 
অমলিন গ্রীবার কাছে নতজানু 
আমি এক প্রাচীন পাতক 
ভালোবেসে অগ্নি করেছি পান 
হৃদয়ে মেখে নিয়ে জলজ অভিশাপ
আমি তো কতকাল কতোবর্ষ ব্যাপে 
অকাতরে নিজেকে নিজের কাছেই 
পরাজিত করে 
তোমার তীর্থমন্দিরে পুজো দিতে চেয়ে
দেখেছি - ভালোবেসে যারা যায় যেতে হয় বলে
আমারই মতন তারা কতো অসহায় কতোটা বিরান 
খা খা  মরুভূমি
কতো যে গভীর করে ঝরে যেতে চায় 
কী এক অভিমান-অনুভবে বুঝি
 
তবু তোমাকে না ছুঁয়ে মৃত্যুকে ছোঁবো
একদিন মৃত্যর কোল জুড়ে জন্মজখম খুঁড়ে দেবো
তোমাকে না  তোমাকে না কসম 
তোমার তোমাকে ছোঁবো

দুঃখের শহর
 
আমার কিছু পরিপুষ্ট দুঃখ প্রয়োজন
সেইসব দুঃখ আমি মোটা দরে বিক্রি করে
দুঃখপতি হবো যেভাবে ছুরিওয়ালা রাতারাতি সমাজপতি হয়ে যেতে পারে
আমাকে দুঃখ দিতে পারো অনায়াসে 
বিনীত ভঙিমায় হাত পেতে নেবো
একেকটি দুঃখের জন্য হৃদয়ের 
একেকটি দরোজা হাট করে খুলে দেবো
ওখানে আজন্ম রাখা আছে 
এক অফুরন্ত গুহার মতো দুঃখপোষা মাঠ 
সেই মাঠে চারপাশে অজস্র দরোজা 
খুলে দেবো হাসি মুখে
সঞ্চিত সমগ্র শক্তি খরচ করে
যতো খুশি দুঃখ আমাকে দাও
দুঃখ বিক্রি করে আমি দুঃখপতি হলে
তোমাদের আর দুঃখ থাকবে না কোনো
কেননা তোমাদের সকল দুঃখ আমি 
একাই কিনো নেবো 
কেননা সেই সব দুঃখ আমি 
আমার কাছেই শুধু বিক্রি করে দেবো
রাষ্ট্রীয় শোষকের মতো সকল দুঃখ শুষে নিয়ে
দিনশেষে হবো আমি দুঃখের শহর


অলংকরণঃ তাইফ আদনান