জলধি / কবিতা / মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়ার তিনটি কবিতা
Share:
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়ার তিনটি কবিতা

বৃষ্টি আলাপ

তোমার সামনে বারবার আসি
হাত কচলে স্বীকারোক্তির ভঙ্গিতে
সুপারিশ করি এই খেলা
ভেসে থাকার,ভাসিয়ে রাখার এসব নিজস্ব
সাঁতরে পার হই যত,
ততকিছু ডাঙাজমি এই গ্ৰহে নেই
অগত্যা বদর বদর বলে নোঙরের নিঝুম
আরও দূর প্রায় নিরাকার সারেংবাড়ির ঘাট
বাঁকানো মেঘের গুচ্ছে ইচ্ছে করে সময়,
ছাল ওঠা খানিক পুরনো,তার গায়ে হাত বোলাই
বেড়াতে গিয়ে খেতিবাড়ির আলপথে লুটোপুটি খাই দুজনেই
তোমার আঙুল যা খুবই হালকা,
হাওয়ার মতোই আজব ওপরে উঠতে বলে..
ওপরে ভেসে..নীলিমা হতে বলে
অথচ তাকালেই আগুন ধরে যায় চোখের গায়ে
আশমানের বুক অবধি ছাইয়ের আঁশ ভারি হয়ে আসে
খুব কিছু লম্বা জীবন নয়
অযাচিত  থেমে গেলে নির্মাণ!নির্মাণ!
মর্মে আঙুল রাখো যেন ভেজা না লাগে
এ ঘরবসত জলের অতীত হয় নাতো
শুধু গলুইয়ে ছাঁট এসে লাগে
নিরন্তর টাটকা দাগ লেগে থাকে গালে
যে নুনে তোমার ঠোঁট ভাসে
ভেসে ভেসে পুরনো এ গ্ৰহে কতো যে জলের ঋতু
রেখে যায় আমাদের ঘোরলাগা বৃষ্টি আলাপ...


নাম

নাম জিজ্ঞেস করে শুধু
স্বীকারোক্তির মত মেসেজ পাঠায়
নাম জিজ্ঞেস করে আর ব‍্যস
ডুবো পাহাড় উঁচু হয়ে ওঠে।
অথচ হাওয়া নেই,সমুদ্র শান্ত।
কারো ঘুম না ভাঙিয়ে আমি
পেরিয়ে যেতে চাইলাম বিপজ্জনক এই অঞ্চল
প্রথমেই শিখিয়ে পড়িয়ে নিই দুহাতের আঙুল
হারানো ম‍্যাপ থেকে জেনে নিই যত সাংকেতিক রাস্তা।
রাত্রির বোর্ডে তারা জ্বলে নেভে
অন্ধকার টেবিল থেকে মেসেজ পাঠায় কারা
নাম বলো..আর জলের রেখা উঁচু হয়ে যায়
অন্ধকার ধরে ওঠানামা করে জল
কম্পাসে ইশারা খুঁজি,মরিয়া কোনও সংকেত।
ক্রমশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে গতিপথ
কেবিনের হাল্কা আলোয় নিরুপায় চাকা ঘোরে ,
ঘেমেওঠা  আঙুল দেখতে পাচ্ছে
জলতল থেকে  উঠে আসছে কাছিমের পিঠ
বড় হচ্ছে ক্রমশই,তীক্ষ্ম ও অভিমুখী হয়ে উঠছে প্রশ্নরা
নাম বলো..ওভার ! নাম বলো..ওভার ওভার..
বলো রাত্রির নাম.. বলো প্রিয় বন্দরের নাম..


পাঠশালা

মুর্শেদের গানে রোজ পাঠশালা বসে
পাথরের তসবি হাতে তিনি পেরিয়ে যান
গাথা ও দোঁহার নির্জন ছায়া
সন্ধের চৌকাঠে দাঁড়ায় মুশকিল আসান
তার লম্ফের ভুঁষো কালিতে  জল নামে সারিন্দায়
তারের যন্ত্র থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল দ‍্যাখে
নিবু নিবু চিরাগের দাঁড় বেয়ে
চলে যান দুনিয়াজাহানের পথে
জেব থেকে শুশ্রূষার পাত্র বাড়িয়ে দেন রাত্রির দিকে
দুঃখভেজা রুটি আলো চলকে তোলে সামান্যই
সব পেরেশানি ভুলে দেখি সে কুসুমভোর
সহজপাঠের পথে মৃদু গায়
ধুলোকুটো মুছে আঙিনার পোড়োরা বসেছে পূবমুখো
কুয়াশা ঘুমের পাশে মাটির জানলা খুলে
সকাল আনেন সাঁই...



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন