জলধি / কবিতা / বিরামচিহ্নের কান্না
Share:
বিরামচিহ্নের কান্না

সবখানে একই মুখ, একই অসুখ

সময় এখন সংগঠনের, সমর্পণের

ঝরাপাতা বাতাসে জড়ো হয়

আবার গড়িয়ে পড়ে গহব্বরে।

 

দাড়ির স্থানে দাঁড়িয়েছে ধূর্ত কমা

সেমিকমাও সুযোগ ছাড়তে চায়নি

এই ভেবে দূরাগত দীর্ঘশ্বাস

ঊর্ধ্বকমাও মেতেছে উল্লাসে

মুখে দখলের উপচানো হাসি

যেভাবে জল উপচায় অনায়াসে।

 

যন্ত্রচালিত জলবাহন পেয়ে

ভুলে গেছি ভিস্তিওয়ালার কথা

যার মশকে নিদ্রিত তুমুল-তিয়াসা

জলজোগানে হেসেছে প্রাণপ্রকৃতি

সে-ও এখন দূরদ্বীপের রূপকথা

ভাঙাকলসের পেটের সদৃশ

পরিত্যক্ত পড়ে আছে কলপাড়ে।

 

বৈষম্যের বিশ্বে

বিরামচিহ্নের বোবাকান্না

প্রশ্নচিহ্ন যেন বনপোড়া মন

বিস্ময়চিহ্ন যেন ভোঁতা তরবারি

কোলনের দুচোখে গলিত মোম

হাওয়ায় ভাসে সিরামিক বন।

 

ড্যাশ চিহ্ন বরাবরই একা

শূন্যস্থানে শুয়ে চিরদুঃখী 

নেই গরিমা, নেই তারস্বর

অব্যক্ত আর্তনাদে অধোমুখী।

 

স্তুত, সুখ-দুঃখ দুটি চোখ

পরস্পর হাওয়া ও ঢেউ

যত খুশি ভেসে যাও, ওড়ো

ভেসে থেকো বাতাসে শুন্যে

বিরামচিহ্নের কান্না মেনে নিও।

 

সেখানে আমি নেই

নিঃশ্বাসের হাওয়া আছে

কিছুকাল রোদে দাঁড়িয়ে

ছড়িয়েছি ছায়া

কিছুকাল ছায়ায় দাঁড়িয়ে

বাড়িয়েছি মায়া

হৃৎপিণ্ডে বসেছিল বনস্পতি

যেই-না তাকিয়েছি

উড়ে গেছে সবুজ-সান্নিধ্যে।

 

তারপর দীর্ঘ আড়াল

সময় গড়িয়ে পাহাড়ে ঘুমায়

দুয়ারে দাঁড়িয়ে উন্মনা বউ

কাঙ্ক্ষায় থাকে নিঁখোজ ঢেউ।

 

নিজেরে ভালোবাসি

হোক ঘর্মাক্ত অবয়ব

সম্মুখে রক্তাক্ত রণরেখা

বিদীর্ণ দিশাহীন দিন

বিচ্ছেদের বালিহাঁস

হারায় নিঃশ্বাসে

বিঁধে রয় প্রেমের আলপিন।

 

সবুজ অরণ্যের বনস্পতি

ঠিকানা সিরামিক বন

শামিয়ানা গহীন কান্তারে

নির্জন নির্বিঘ্ন হাওয়ামহল

সেখানে নিশি-নৈঃশব্দ্যে

উদ্দাম নৃত্যে মদিরার ঘোর

কোথায় হারিয়েছে-

বিরামচিহ্নের ভোর?

 

বিশুদ্ধ বাতাসে হাসে পাতামুখ

পাড়ি দিতে সীমিত আয়ুবন

যাত্রাপথে জীবনের রঙবাহারে

মোহের মরীচিকা, ভোগের প্লাবন।

 

হলুদপাতার ঝরে যাওয়া দেখে

সবুজপাতার ব্যাকুলা বিলাপধ্বনি

মর্মে নিহিত নদী, আহা আয়ুষ্মান

এই বোধে উদ্বোধিত নবি সোলেমান।

 

নশ্বর নির্জন নিবেদিত আয়ুবনে

শুকনো গাছের ডাল যেন কঙ্কাল

ঝুলে আছে অনন্ত জীবনের সন্ধানে

সেখানে বসে আছে নিঠুর শিলীমুখ।

 

এই তো সীমিত জীবনের দাড়িকমা

বিরামচিহ্নের কান্না।



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন