জলধি / কবিতা / ফেরদৌস নাহার এর তিনটি কবিতা
Share:
ফেরদৌস নাহার এর তিনটি কবিতা

হার্ট মিউজিয়াম

 

আমার কোনো জন্ম নেই

আমি পাতাল অন্ধকারে হেঁটে বেড়াই জন্ম-মৃত্যু খুঁড়ে খুঁড়ে

জেনে গেছি মানুষের এই কোলাহলে আমি আর কখনই জন্মাব না

পৃথিবীর জাদুঘরে জাদুঘরে ঘুরে ঘুরে দেখেছি অনেক প্রত্নপ্রয়াস

চুরচুর দীর্ঘশ্বাসে একাকার তামাদি স্মৃতির হরিণ

 

এত সব মিউজিয়াম আর আমি খুঁজি তার গোপন কপাট

যেখানে সুরঙ্গ চলে গেছে ব্যক্তিগত অলিন্দের কাছাকাছি

হৃদয় উড়ে গেছে অবাধ্য শৈলচূড়ায়, দিগন্ত ছুঁয়েছে হাড়ের লণ্ঠন

ছোট বড়, ফাঁকা ভরাট, শূন্য মহাশূন্য রাশি রাশি হৃদয়

দীর্ঘশ্বাস প্রতারণা অথবা অন্যকিছু নিয়ে সাজানো কাসকেটে

বসে আছে চুপচাপ কতকালের বৈঠকি আয়োজনে

আমি আর জন্ম নেব না এসব দেখতে।  এখন 

গা-ঝাড়া চিৎকার আমাকে নিয়ে যাচ্ছে উড়ন্ত চক্রযানে

আজ উদ্বোধন হবে এক নতুন মিউজিয়ামের...

 


এথেন্সের খুব কাছে খুব দূরে

 

আমার চোখ ছিল না, তাই তুমি সহজেই বলতে পেরেছিলে, অন্ধ!

 

হোমারের হাত ধরে যেদিন হেঁটেছিলাম ধুলিময় প্রত্নপ্রান্তরে

সেদিন ঝড় উঠেছিল! ইতস্তত ইতিহাস মহাকাব্যের দুহাত জড়িয়ে

কেঁপেছিল দাঁড়িয়েছিল। আমরা দুজনই দৃষ্টিহীন ছিলাম

বিপজ্জনক চুম্বন ও পিনপতন নীরবতায় যাবতীয় স্যাক্সোফোন

বেজে উঠেছিল দেয়াল চিত্রে

একঝাঁক জন্মান্ধ নাবিক সাঁতার কাটছিল জলবৈদিক যুগে

সেবকেরা তাদের পোশাক নিয়ে হাম্মামখানায় অপেক্ষায় ছিল

হাইড্রলাস বাজাচ্ছিল বাদকের দল, আলো আঁধারি আঙ্গিনায়

স্নানবিলাসীদের  চারদিকে  বৃষ্টি নেমেছিল ঝমঝম শব্দে...

আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম  নির্জন কোনো আক্রোপলিস ছাউনির নিচে

এবং ছড়িয়ে যেতে পেরেছিলাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ অথবা

স্বর্ণযুগের প্রাচীন গল্পগুলোতে

 

আমাদের গ্রাম সেদিন প্রাচীন বৃষ্টিতে ডুবু ডুবু উষ্ণতার সন্ধানে

এথেন্সের খুব কাছে খুব দূরে ধাঁধার মতন জলীয় এবং অনাবিষ্কৃত

অন্ধত্বের অপবাদে অন্ধকার যুগের প্রতিধ্বনি কানে লেগে আছে...

 


অ্যালঝাইমার

 

নাম ভুলে যাওয়া অসুখটা বেড়ে যাচ্ছে,

এমন কী নিজের নামও অচেনা লাগে মাঝে মাঝে।

সহজে কবিতা আসছে না বলে রাগারাগি করছি যার সাথে

সে নাকি আমি! খুব অবাক হয়ে যাই

তাহলে কাকে আমি বলব এই ব্যর্থতার কথা?

কাকে দায়ী করব এই অক্ষমতার জন্যে!

নিজেকে কি নিজে কেউ দায়ী করে বলো?

সবশেষ ব্যর্থতা আঙুল তুলে বলেছে, এই শেষ যা চলে যা

কাল রাতের বৃষ্টির পর জেগে উঠবে পলিময় জাগৃতি তখন

ফসলের ঘ্রাণে ঘ্রাণে চারদিক ভরে উঠলে কে তোকে পুছবে

 

আজ সুটকেস গুছিয়ে রাখি, কাল হয়তো চলে যেতে হবে

কিন্তু নাম ভুলে যাওয়া অসুখটা কোথায় যে ফেলে রেখে আসি!



অলংকরণঃ তাইফ আদনান