
বচন
অবশেষে ডাক এলে ফেরাতে যাব না
ডুব দিয়ে পার হব হাঁটুজল-নদী
কীভাবে এড়াতে পারি অন্তরের ডাক
আমাকে খুঁজছে কেন অনন্ত জলধি?
নিজে না ফিরলে ঘরে, কার অত দায়!
কে ঘরে অপেক্ষা করে আঁচল বিছিয়ে!
যে যার গন্তব্য খুঁজে নিতে পারা ভালো--
অশান্ত হৃদয়নদী বাঁধব কী দিয়ে!
ঝুলিতে ঝিমায় দেখি পারের কড়িরা
ঘরের বাইরে আসি খালি হাতে একা
ডাকের মহিমা জানে একান্ত স্বজন
কজন পড়তে পারে মৃদু হস্তরেখা!
বচন দিয়েছি বলে অন্যথা হবে না
জীবনেই শেষ হোক যাবতীয় দেনা।
মেদুর
এই বুঝি সরে গেছে মেঘ—মেদুর বরিষা
চটি পায়ে পথে গেছি নেমে
কিছুটা অনিচ্ছা আর কিছু থেমে থেমে
পূর্ণ করি অন্তহীন জীবনের তৃষা।
যাযাবর হতে চেয়ে নিয়েছি সন্ন্যাস
জঙ্গলে দিয়েছি ফেলে রক্তমাখা তির
পল গুণে শেষ করি তীব্র দিন-মাস
স্মৃতিরা কেবল করে এলোমেলো ভিড়।
জানি না কোথায় চলে যাই
কত দূরে জলসত্র রয়েছে দাঁড়িয়ে
কোনখানে পাব গিয়ে সদানন্দ ঠাঁই
কে আমাকে মাল্য দেবে দুবাহু বাড়িয়ে?
কল্লোল
মধুমতী নদী, নাকি শখের প্রতিমা
কখনো মাপিনি তার ঊর্ধ্ব তলসীমা
কেবল সাঁতরে গেছি এপার-ওপার
কখনো তালের ডিঙা সয়েছে দুর্ভার।
মধুক্ষরা নাম তার ফেলেছে হারিয়ে
মধুনাম খুঁজে ফিরি একা কূলে গিয়ে
আমাকে দেখায় নদী বালুবক্ষ তট
ঘাটের পসরা দেখি-- মনসার পট!
এদেশে মনসা ছিল, এখনো কি আছে?
দুধকলা ছাড়া তার কী খেয়ে যে বাঁচে
মনসা খায় না দুধ
ফুঁ দিয়ে বানায় শুধু ফেনিল বুদ্বুদ।
মধুমতী নেচে গেছে দূরে
জঙ্গম শরীর তার চলে ঘুরে ঘুরে
কান পেতে শোনা যায় মৃদঙ্গের বোল
বুকে পুষে রাখা তার গোপন কল্লোল!
হুন্দানামা
এই নামে নদী ছিল, বলেছিল
আমার ঠাকুরদাদা
নদী কি হারিয়ে যায়,
হয়ে ওঠে ধানক্ষেত বালুময় কাদা!
নাকি, দাদু ভুল বলেছিল
নবতি পেরিয়ে তার মৃদু স্মৃতিভ্রম!
নদীকে সে মরে যেতে দেখে
কী আক্রোশে কেড়ে নেয় যম।
এখানে নদীটি নেই
আঁকা নেই যবনিকারেখা
একটি নদীর খোঁজে তবু আমি রোজ
ভেজা পায়ে হেঁটে চলি একা।
মুহূর্ত
কখনো মুহূর্ত আসে
জেগে থাকে পুরো আটচল্লিশ মিনিট
কীসের এককে মাপি রোদের সুবাস
কুরে কুরে খায় শুধু সময়ের কীট।
জীবনে মুহূর্ত যদি আসে
চৌদ্দবার পাবে তারে ঘরে
পারলে ঠেকিয়ে রেখো
শ্রাবণে-ভাদরে।
অলংকরণঃ তাইফ আদনান