জলধি / কবিতা / জেবুন্নেছা জোৎস্নার তিনটি কবিতা
Share:
জেবুন্নেছা জোৎস্নার তিনটি কবিতা
সূর্যমুখী 
পাঁচটি অক্ষর, সাতটি অনুমান আর সাত কাঠামোয়
ব্যর্থ হয়েও যেন তুমি সৃষ্টির অধিক স্রষ্টা!

সূর্যের উষ্ণ ক্ষমতায় ভ্যান গগের কর্তিত কানের রক্তে

আঁকো তাই হলুদ সূর্যমুখী, আর আঁধারে শুঁকতারা!

 

হঠাৎ ঝুনঝুন শব্দে কাঁপে তোমার বসন্ত জলাভূমি

ভাবলে, হয়তো এলো পরিযায়ী সাইবেরিয়ান রাজ-শরালি!

ডানার শব্দ কাছে হতেই ঘটে ভ্রমের ভ্রান্তি

বুঝলে, ওরা বুঝি বন্দুক ঠোঁটে জমিনে পাথর ছোঁড়া

লাখ লাখ আবাবিল পাখির যোদ্ধা বাহিনী!

 

বসন্তের সেই রাতে চন্দ্র, শুকতারা আর তারাদের

অবস্থান নির্ণয়ে - তুমি মুগ্ধ হয়ে দেখো পিউপলে

ইউক্রেনের আকাশে ঝরে মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্রের বৃষ্টি

 

ঈশ্বরের ইচ্ছায় মূহুর্তে ক্ষত -বিক্ষত অজস্র শরীর

যেন পারমাণবিকতায় বিধস্ত ফুকুশিমা - চেরনোবিল!

তুমি তখন রক্তের তেজস্ক্রিয়তা শুষে নিতে

 মুঠো মুঠো ছড়িয়ে দিলে জমিনে সূর্যমুখী বীজ!

 

তোমার ক্যনভাস জুড়ে হাসে উজ্বল সূর্যমুখী

তাঁরা কারো পত্নী, কারো ভগ্নী, পিতা-মাতা, সন্তানাদি — 

কেবল তুমি আর পুতিন দেখলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি !


ঘোড় দৌড়

ঘর ছেড়ে বের হয় যে, সেই- জানে ঘরের কি মায়া

আপন মরা কোষগুলো ছাদ ছুঁয়ে আমৃত্যু টানে!

উত্তুরি হাওয়ায় গেরুয়া পাতার উড়াল মিছিলে-

মধ্য রাতের ঘন অন্ধকারের মিথস্ক্রিয়াতে

পাহাড় - মেঘ, অরণ্যের সৌন্দর্য লুকায় রাত্রির নেকাবে

বেতফুল কষ্ট আমার প্রস্ফুটিত তখন আদ্র পরিজাতে।

 

খই ফোটা থই থই আকাশ সীমানার নক্ষত্ররাজিতে         

অনিশ্চিত মুক্তির অপেক্ষায় নিত্য কতো

তারা মরে জন্মায়, কে খোঁজ তার রাখে!

আস্ফালনের অতলে সুরঙ্গময় পৃথিবীর ভুতুরে গহব্বরে

ধবধবে কিছু ইঁদুর আর বাঁদুরেরা ডানা মেলে লাল চোখে!

ওরা কি দাঁতের স্ফুলিঙ্গে নামাবে ভোর পৃথিবীতে?

 

অতঃপর কতক অশ্বমানব একগোছা লেজ তুলে

বিস্তৃণ রাত্রির হলদে আলোর থকথক কুয়াশা ভেঙ্গে

দৌড়ে পালায় চিঁহিঁ চিঁহিঁ হ্রেষা স্বরে

 

আমার স্বপ্নেরাও তখন অপসৃত ছায়ার বৃত্তে

ক্রমাগত লালচে ইট তারকাঁটায় যায় পেঁচিয়ে !

সব কিছু পিছনে ফেলে রদ্ধশ্বাসে আমিও দৌড়াই

জীবনের অপ্রয়োজন ঘোড় দৌড় বাজিতে!


ভদ্রলোক

আকাশ বাসে সাগর ভালো নিঃসঙ্গ নৈর্সগে

সময়ের ঘর আলোকবর্ষকালের মহাগর্ভে

ইস্ট রিভারে বুঁদবুঁদ ভেসে মৎস পোনা থাকে

বৃহদাকার দাঁতল মৎস, গপ্ গিলে খায় তাকে !

যোগ বিয়োগের খেলায় জানি যাবে বৃহৎ জিতে

জানে না কেউ সাপ লুডুর খেল যায় কার বিপরীতে!

 

মানুষ আমি, পশু কিংবা মেরুদন্ড হীন নই

সিন্ডিকেটের চাকচিক্যে তাই সুবিধা নেই না সই!

এঁদো -মাটির শামুক কাদায় ছুঁইনি সারমেয় লোল

কোরাল ঠোঁটের মন্জুরীতে, ধরিনি রসের  বোল!

জোব্বায় দেইনি ধর্মের  আতর, সুরমায় আঁকিনি চোখ

সিন্ডিকেটর নই যে আমি, অতিশয় ভদ্রলোক!



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন