জলধি / কবিতা / চাষা হাবিবের তিনটি কবিত
Share:
চাষা হাবিবের তিনটি কবিত

দাঁড়দেয়াল 

দাঁড়িয়ে যাওয়া দেয়ালে
শৈবালপ্রেম মাথা ঠুকে প্রলেপ দেয়।
দাঁড়িয়ে যাওয়া বৈকালিকরোদ স্নান সেরে গা মুছতে মুছতে
দেহের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় সামাজিক নরবাদকষ;
অথচ দেয়াল জুড়ে আমাদের লাগানো লতাগুল্ম
হাইব্রিড জেনেমে কাজলরোদে অচল দেহসাজায়;
আমাদের রাষ্ট্রজ্ঞান শেখাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় বিলাপদেয়াল
টাচস্ক্রিন ঘুষি মেরে ভেঙে দেয় দাঁড়িয়ে থাকা ছবিশব্দপ্রাণ;
তারপর থেকে দেয়াল জুড়ে আঁকা হয় গ্রাফিতি— দাঁড়দেয়াল;
লেখা হয় শ্লোগান— অশরীকবিতায় ছাপা হয় দশমিক এপিটাফ।

অথচ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে যৌবন শুকিয়ে পোয়াতিরোদে
ঢাকা পড়ে ধুলোসরে রক্তদেয়াল— আমার দাঁড়িয়ে রোদশুকোই।


পোয়াতি ধান ভাঙে শরীর 

তুমি যখন ভাঙতে থাকো
ভাঙতে থাকে শিশির জ¦লা জন্ম¯্রােত
ধূসর বিকেল-কালো দুপুর নগ্ন রাত
ভাঙতে ভাঙতে ভাঙে হৃদপি-নল।
তোমার শরীর নিয়ে বেনামী রাত পড়তে থাকে-পড়ে ফেলে
নরম নরম করাতকোষ; পড়তে পড়তে ছিঁড়ে ফেলে 
           জুলাই বিপ্লব;
পড়তে থাকে তোমার নরম শরীর বাতাবি অভ্যুত্থান 
বিপ্লবী কোষ খসে যায়-খসে ফেলে শরীর জুড়ে
         ভাঙা হয় তুমি ¯্রােত; 
তুমি ভাঙতে ভাঙতে, ভাঙতে থাকো জরায়ু ঘরে জন্ম নেওয়া প্রতœচর
উর্দ্বুদ হয়ে মেনে নাও- মেনে নাও জলের স্লোগান
উর্বর শরীরে মাটির পরত জে¦লে দেয় নাদরস
তুমি ডুবে যাও-ডুবতে থাকে ছত্রিশ জুলাই, বিজয় শরীর
        নাঙ্গা দেহের গরম তালরস;
তুমি ভাঙতে থাকো; ভাঙে তোমার শরীর মন
পোয়াতি ধান ভাঙ্গে শরীর-প্রথম চক্রে দেহ ভরে তোমার পোয়াতি ধান।


মৃত্যু মাটিতে নামে আকাশে নয় 

তারা আর নামেনি—
একটি খেলনা ছিল, একটি গল্প ছিল— ছিল দুর্দান্ত আকাশ।
মাটির সব সীমা পেরিয়ে যাবে একদিন—
জানালার পাশে বসে থাকা মুখে ছিল বিস্ময়, চোখে স্বপ্ন রঙিন।

কে জানত, মেঘের ভেতরেও লুকিয়ে থাকতে পারে নিঃশেষ নীরবতা!
একটা বিকট শব্দ, থেমে যাওয়া ডানার গতি— তারপর সব নিস্তব্ধ।
শুধু ধোঁয়া, ছেঁড়া জামা, আর একটি পুতুল পড়ে থাকে নিঃসঙ্গ।

তারা আর ফিরবে না স্কুল থেকে, চকলেট চাইবে না, গল্প শোনাবে না
মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বে না আর কেউ— শুধু শূন্যতা বোবা শূণ্যন।

কতটা স্বপ্ন ভেঙে গেলে একটি পৃথিবী থেমে যায়!
কতটা কান্না জমলে আকাশ কেঁপে ওঠে এমন!
তারা আজ তারা হয়ে— আলো হয়ে জ্বলে থাকে অদৃশ্য কোনো দ্বীপে।

আমরা শুধু কাঁদি— আর ফিরবে না তারারা আকাশের দেশে!
অথচ সেদিনও ছিল শিশিরের মতো স্বপ্ন আকাশ— মায়ের মায়াবী চুম্বন;
ছোট দুটি হাত জানালার কাঁচে, নভোযানের ডানায় আঁকা ছিল হাসি।

তারা জানত না, আকাশও রুদ্র হয়— যেখানে মেঘেরা তুলো নয়
থাকে নিঃশব্দ বিস্ফোরণ— মুহূর্তেই থেমে যায় কোলাহল;
চকলেট, খেলনা আর গল্পের ঝাঁপি— ভেঙে পড়ে ভোররং নীল শিশির।

মা-বাবা চেয়ে থাকে শূন্যে— স্কুল ব্যাগে আজ আর কেউ রাখবে না বই
খেলাঘর খালি, কাঁথার নিচে নিঃশ্বাস নেই— রক্ত হিম নরম মুখছবি।

আকাশে শিশুরা— জ্বলছে, নিভছে, বলছে—
আমরা হারাইনি বাবা, রয়ে গেছি আলোয় মা; মৃত্যু শুধু মাটিতে— আকাশে নয়।

[মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ ট্র্যাজেডিতে নিহত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে]



অলংকরণঃ তাইফ আদনান