জলধি / কবিতা / কাজী সোহেলের পাঁচটি কবিতা
Share:
কাজী সোহেলের পাঁচটি কবিতা

গ্রাম

এবার বসন্তে গ্রামে যাবো

হুইলচেয়ারের চাকাগুলো ঘ্রাণ নেবে

ঘাস, ধুলো মাটির

ফুসফুস ভর্তি হবে শ্রেয়তর বাতাসে

হয়তো কোনোভাবে একটা বৃক্ষ ছুঁতে পাবো

এবার বসন্তে গ্রামে যাবো

সম্ভাবনা আছে সামান্য কিছু সময়

একটা নদী দেখতে পাবো

নিদেনপক্ষে কিছু পাখি আর একটা জলাশয়

জানি না সন্ধ্যা নামবে কিনা সামনেই

নাক পাবে কিনা স্মৃতিঘরে রাখা

কুপি সন্ধ্যার ঘ্রাণ

সেদিন কি কোনো হাটবার থাকবে?

চোখের ওপর কি একটা হাটের জমে ওঠা

ফুরিয়ে যাওয়া দেখতে পাবো?

লোকালয়ে ছোট্ট ছোট্ট বন ছিল একসময়

যাতে বেতফল, দাতই, তিতিজাম লুকিয়ে থাকতো

যাকে তাচ্ছিল্যে বলা হতো জংলা

আহা ! তেমন কিছু কি রয়েছে এখনো?

এসবের জবাব জানা নেই ঠিকঠাক

আজকাল কতো কিছুরই তো উত্তর জানি না

তবু বেহায়ার মতো স্বপ্ন দেখি

অনেকদিন পর

অনেক বছর পর

আসছে বসন্তে গ্রামে যাবো...


 অকালবৈশাখে

নিখুঁত ছবি এঁকেছে কেউ কোথাও

বছরের প্রথম ঝড়ের দিনে...

আধপুরনো বিশাল খোলামেলা ছাদ

মাতাল ঘুড়িগুলো জলবাহী মেঘ ছুঁতে চাইছে

এমন দিনে গান গাওয়া প্রিয় অভ্যাস

তুমি নগ্ন পায় আর পায়রাশুভ্র জামায়

পশ্চিমের কোমর অবধি প্রান্তদেয়াল

হেলান দিয়ে দুপাশে ছড়িয়ে দিয়েছো দুহাত

বেয়াড়া বাতাসে ওড়ে সযত্ন লালিত কৃষ্ণরেশম

ওড়নাও যেন শান্তি দেশের পতাকা...

অপলক দেখছে আকাশ

নিখুঁত ছবি এঁকেছে কেউ কোথাও

বছরের প্রথম ঝড়ের দিনে


জোনাকি হত্যা মামলা

বর্ষায় বৃষ্টি হয়নি

রৌদ্র দহনে পুড়ছে শরৎ

নগরে সবুজ ক্রমহ্রাসমান

গ্রামেও মুমূর্ষু বৃক্ষ-বিরুৎ-লতাগুল্ম

লোভের রাক্ষস গিলছে নদী খাল-বিল

কতোদিন উঠোনে চড়ুই আসে না

শেষবার টিয়া দেখেছিলাম বেশ -বছর আগে

ঘর লাগোয়া কামরাঙ্গা গাছে

শালিক দোয়েল কোথায় হারিয়েছে জানি না

অথচ-

একসময় ঘরে জোনাকি ঢুকে যেতো

বিস্ময় বিমুগ্ধ চোখ দেখতো আলো-আগন্তুককে

কোথাও জোনাকি দেখি না আর

সর্বগ্রাসী প্রকৃতিবিরুদ্ধ মানবসমূহ

অহর্নিশ খালি করছে প্রকৃতির বুক

কোনো একদিন অবশ্যই তাদের

দাঁড়াতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়...


ধানফুল

তখনো তিনি মা হননি, তাই কি!

তাহলে বড় বড় চোখ

শ্যামলা, তুলতুলে শিশুর কপালে

কেনো এঁকে দিতেন কৃষ্ণচন্দ্ৰ?

ঘেমে যাওয়া গলা বুকে

সযত্নে বোলাতেন সুরভিত রেশমগোলক!

সামান্যেই হেসে কুটিকুটি ছেলেটি

কান্নাকাটি নেই একদম

বাবুটির মা ব্যস্ত ভীষণ রান্না-বান্না ঘরকন্নায়

সুযোগে একলা হামাগুড়ি নিজের মতো খেলা

মায়াময় দুহাতে তিনি তুলে নিতেন কোলে

অনুমতি সাপেক্ষে নিয়ে যেতেন বাড়ি

তারপর... কোজাগরী জোছনার মতো ঝরতো মায়া!

একদিন দুষ্টু-মিষ্টি-বোকা বাবুটা

সবার অলক্ষ্যে পেরোয় বাড়ির সীমানা

খোকার বুঝি তখন থেকেই বেড়াবার বড় সাধ...

ধুলোময়লা মেখে

পথের ধারে আপনমনে খেলছিলো সে

দেখে তিনি এলেন ছুটে, বুকে তুলে নিলেন

অযত্নে খানিক রাগ হলো তাঁর

না বলেই বাড়ি নিয়ে গেলেন

নাওয়ালেন, খাওয়ালেন, ঘুম পাড়ালেন আদরে

মাসহ বাড়ির সকলে অস্থির, ব্যাকুল খেয়াল হতেই

নিজেই এলেন ঘুমকাদা বাবুসহ তখনই

আর যেন অবহেলা করা হয় না বাবুটাকে

আজ অবধি মা আমার

বুকে আগলে রেখেছেন আমাকে

হারিয়ে যাওয়া তিনি মনগহিনে

ধানফুল হয়ে আছেন ফুটে...


বৃষ্টি বৃষ্টি

শহরগুলো ভিজছে যেন স্কুল পালানো বালক

আঁধার করে ঢাকায় বৃষ্টি কোলকাতাতে আলোক

উত্তরা থেকে যাত্রাবাড়ি ভিজছে অঝোর ধারায়

পড়ছে বৃষ্টি বেহালাতে পড়ছে কলেজ পাড়ায়

ঝরছে বৃষ্টি টাপুর টুপুর ঘরবাড়ি পথঘাটে

গাইছে বৃষ্টি উদার গলায় নগরের সব মাঠে

তোমার আমার বৃষ্টিবিলাস নয় সকলের প্রিয়

বৃষ্টি এলেই বাস্তুহারার খবরটুকু নিয়ো...



অলংকরণঃ তাইফ আদনান