জলধি / কবিতা / এমরান হাসানের পাঁচটি কবিতা
Share:
এমরান হাসানের পাঁচটি কবিতা
ছয়

‘শুনিতে পাই দেহের চৌদ্দ ঘর
আঠারো চারিতে করিয়ে বিচার
লা-মোকামে আছে তাহারি ওপর
    মওলার নিজ আসন সেহি পুরি।।’

দোলায়িত চিত্রের আব্রু ধ্বসে যায় বোহেমীয় প্রশ্বাসে
শিহরিত পদ্মপাতারূপে মুখরা জগৎ
পূণ্যরূপ বিশ্বাসের আহবান দেহনিদ্রা-মায়ায় ।

অঙ্কিত হাওয়া-পোর্ট্রেট এর গান গীত হোক সরেস সম্মোহনে।
অন্তরাত্মা দুলে যায়...
দুলে যায় পঞ্চ আততায়ী,পদ্মনৃত্যস্বরে উদ্ধত হে মৃণ¥য়ী সুখ।
ভ্রমযুগ ঘুরে ওঠা রঙহীন আলোর ঘ্রানে
নুয়েছে অশেষ রঙচঙা বরফের ঔঁ,
ঘুম-অঘুমের মঞ্চের পৃথিবী আঁকো
অজরামর পরমানন্দনৃত্যমুদ্রাভণিতায়।


সাত

‘ঘটে পটে সব জায়গায়
আছে আবার নাই বলা যায়
চন্দ্র যে প্রকার,উদয় জলের পর
    অমনি সে বিরাজে এই মানুষে।।’

নিষাদ নগরে দোলে পূণ্য-পাপ
হাওয়া মহলের সিনান সেরে যাও পরমানন্দযাত্রায়
পালঙ্কে লেপ্টে থাকে জীবনের সুর,জন্মস্মারক

এই তো সমুজ্জ্বল চিন্তা-দ্যোতনা
ভেসেও ভাসে না সে নিরন্তর চেনা
দেহধ্যাণ থেকে দূর ওপাড়ে নামে কেউ

মোহ,মায়া ঘিরে রাখে অপঘাত স্বর
অহেতুক জন্মচিতায় কাল...কালান্তর


আট

‘রূপের কালে আমায় দংশিলে
উঠিল সে ব্রহ্মমূলে
কেমনে সে বিষ নামাই
সে বিষ গাঁঠরি করা না যায় হরা
    কী করবে এসে কবিরাজ গোঁসাই।।’

আবছায়ার পিদিম জে¦লে যায় এই কুয়াশা
নিরঙ্কুশ মায়াবী থই থই নির্লোভ ফুলেল অনলে।
প্রিয় স্পর্শের বিহ্বল আকুতি জেনেছিলো
অপরাজেয় শস্যপুরাণের পাঠশালায় অপাঠ্য সময়ের শেষপর্ব পাঠ।

আঁচলে কতকাল ওঠে না শীৎকার
ঘুম-ঘোরের আলোয় নাচে আদিম কাম-পরমায়ু
মধ্যরাতে জেগেছিলো ভাগাড়ের শেষ শকুন
পথ-পথের ছায়াঘুম জুড়ে নামে কুয়াশা কালান্তর
ঘটে গেছে চেতনাভূমে-বোধের সৎকার।

জেগেছি স্বয়ং সবশেষে ধর্মান্ধ খেউড়ের দিনে
আদি জলাজন্মভূমিতে মৃত্যু আঁকো কার?


নয়

‘ঘরের চোরে ঘর মারে যার
বসতের সুখ হয় কিগো তার
ভূতের কির্তন যেমন প্রকাশ
             তেমনি তার বসতখানা।।’

পেছন পথে যায় অজ্ঞাতস্বরের এই ছায়াপ্রলাপ।

চেতন-ঘুড়ি ওড়ে মরমীয় বেশে প্রতি সন্ধায়
মরণের সমান দীর্ঘ এই শোক কার আহবানে জেগে থাকে
অন্ধ আলোর এই দীর্ঘশ্বাস,করোটি’র রোদ্দুরে শুকোয় করুণ অভয়
ঘটে যাওয়া কিছু একটায় জড়ানো পাপের মঞ্জুরী মাখে হিমবাহ... নৈঃশব্দ্যে সুবর্ণতা

আলগা বিনুনিতে ফুল ফোঁটে রাত্রি জোযারে।
তারো বেশি শুদ্ধ সহজিয়া ফ্রেমে
নূপুরে ভাঙে গড়াই-দেহের সোরগোল।
তবু নৃত্যুন্মুখ জীবনচক্র ধাঁধা।
ভুল সুরের পাদটীকা চিনেছে সেই প্রহর।

যাবৎ দীর্ঘশ্বাসগুলো জীর্ণ  বৈশ্যচিত্র-- মুগ্ধ মোকাম
প্রায় অন্ধ দুটো চোখের সর্বনামে অঙ্কিত আকাশ অরূপ।


দশ

‘সামার্থাকে পূর্ণ জেনে বসে আছে সেই শুমানে
যে রতিতে জন্মে মতি সে রতির কী আকৃতি
 যারে বলে সুধার পতি ত্রিলোকের সেই নিহারা।।’

নিমগ্নতমা হে চতুর চোরাস্রোত
বাজাও বাদ্য অনন্ত বহরের নায়ে
বাতিঘরে সুর তোলে অবাক সংসার
কর্পূর সুবাসে বিহবল স্পন্দিত কররেখা
ভিড়াও হাওয়ার আলোয় ঘুমের কফিন!
নাচঘরে কে আঁকো অনন্ত আকাশ?
শ্রী-বৈষ্ণবিক মোর্চায় নিখুঁত জ্ঞানছবি
ক্ষত্রের আলপথে উড়ে যায় বোহেমিয় ডানার পাখি-কঙ্কাল

মুগ্ধ শরীরের ডাকে বিমূর্ত ছায়া জমায় আসর
তারো চেয়ে আকুল প্রানের নোঙর, স্পর্শের টেরাকোটা,
ধ্যানি পদ্মাসনে গেঁথে আছে আয়নামহল, আপ্তবিলাপ

তর্জনী-টংকারে কাঁপে একতারা,জাহেরি মৌনতা
খাঁচাহীন আত্মারূপ পাখিদেহ টেনে নেয় তিনমহলা বাড়ি।
ঋতুকাব্য শেষে ডানার ভয়ার্ত কাঁপন ঢের প্রিয় তার!



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন