জলধি / কবিতা / আহেদুল ইসলাম আদেলের তিনটি কবিতা
Share:
আহেদুল ইসলাম আদেলের তিনটি কবিতা
খড়ের মানুষ
ধানের আঁটি বেঁধে বেঁধে সারি ধরে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে নারী শ্রমিক
ঘামে ভিজে গেছে পরনের শাড়ি, ব্লাউজ, গলার রূপার হার 
চাক ভর্তি ক্ষুধার মৌমাছি, জ্বলে পুড়ে ছাই পেটের দরবার
জলঢালা এক সানকি পান্তা ভাত কতই বা শক্তি জোগায় 
রক্তের নক্ষত্রিক গতি ছাপ্পান্ন বয়সে আর কত কক্ষপথে ঘুড়ে বেড়ায়? 
ঋণের জোঁক চুষে খায় দিনমজুরি, অনাহারে কেটে যায় সময় 
লাগামহীন ষাঁড়ের মতো ছুটে চলছে দ্রব্যমূল্য, ছিদ্র হাড়িতে
কেমনে জমবে শ্রমের সৌরভ; খড়ের মানুষের মতো চেয়ে দেখছে 
নাগরিক; নেতা, আমলা রাষ্ট্রের ধর্তাকর্তা; একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা
পানকৌড়ির মতো ডুবে ডুবে খাচ্ছে উন্নয়নের রেনু, নাগরিক শুকুন
ছিঁড়ে খাচ্ছে মাতৃস্তন, আবাদি ধান, রেমিট্যান্স যোদ্ধার সহধর্মিণী, বোন!
এই বিব্রত দিনে নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে নূর হোসেনের কথা
কৃষাণের অদৃষ্ট জুড়ে দুঃখ গাঁথা, ছাঁই চাঁপা আগুনের মতো জেগে ওঠে ব্যথা
বানের জলের মতো ঘোলাটে আয়ের রাস্তা, বিদ্রোহ নয় অতোটা সস্তা 
যতোটা না সহজ ভালোবাসা, খড়ের মানুষের শরীরে কী আর বিদ্রোহ জন্মে?
যা কিছুই কর তরুণ রক্তের গরমে, মৃত্যুর ভয়ে মর না প্রতিদিন 
মরে গিয়ে যে বেঁচে যায়, অনন্তকাল চলবে তার গুণ -কীর্তন। 

চাঁদ বলেছে মাটি ছোঁব
আজ এই শস্য ভরা প্রান্তরে, জ্যোৎস্না খাব ইচ্ছে করে
ইচ্ছে হতে সোনালি ডানার চীল, স্মৃতির অলি হৃদবন্দরে ঘুরেফিরে
-অনিদ্রা তোকে ছোঁয়েছি স্বপ্নে, হৃদ দর্পণে, রূপসি বাংলার কবির 
সৃষ্ট প্রতিটি শব্দে, তোমাকে ছুঁয়েছি শিশিরে, নীল খামের প্রতিটি অক্ষরে
-এভাবে বল না আহাদ, পাঁজরের হাঁড়ে ফোটে পুষ্প, পাঁচশত ছিয়াত্তর 
মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় তোমাকে আর কতোখানি দেখবো?
তোমার দশ লক্ষ জিবি ব্রেইনের প্রতিটি সিগনাল দেখ আমি ও আমার 
পর জনমের অনন্ত পরশ।
-ইশ্! এভাবে বল না পাখি, ইচ্ছে করে এখনি পর জনমে দেই পাড়ি।
-তোমার হিমেল প্রিয় হাসি, আমি অনেক ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমার ইবাদতের 
প্রতিটি রুকু, সিজদাহ্, প্রতিটি হরফের শুদ্ধ উচ্চারণ 
-আচ্ছা অনিদ্রা আমি যদি মাটি হয়ে মিশে যাই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে
-আমি জ্যোৎস্না হয়ে ছোঁব তোমার উর্বর অনুর্বর চত্তরে। 
-আমি যদি পুষ্প সৌরভ হয়ে মিশে যাই বাতাসের ওষ্ঠ -পিষ্ঠে?
-আমি আকাশ হয়ে ঘিরে ধরবো গ্রহ, নক্ষত্র হয়ে।
-আমি যদি মুক্তা হয়ে হারিয়ে যাই সমুদ্র বন্দরে?
-আমি ঝিনুক হয়ে খুঁজে নিবো পাঁজরের হাঁড়ে।
-অনিদ্রা তোমার ওষ্ঠ উচ্চারণ প্রতিটি শব্দ মনে হয় বেহেস্তের 
ঝর্ণার কলতান। 
-তোমার দিকে তাকালেই ভুলে যাই দিনক্ষণ। 
-আজ রাত্রে ঘুড়তে যাবো জোনাকিচরে, দেখ, তোমাকে মনে হবে চাঁদ
আর জোনাকিগুলোকে মনে হবে চাঁদ ঘেরা নক্ষত্রমন্ডল। 

দৃষ্টিখুন
পাখি তোমার দিকে তাকালে কিছুই ঠিক থাকে না
চোখ, হাত, পা, - না কিছুই ঠিক থাকে না; অযথাই বাড়ে রক্তচাঁপ
দর্শনের গভীর নেশায় নিমজ্জিত মন যেন বেহেস্তে নিদ্রামগ্ন খাব
মুহুর্তেই একশো চুয়াল্লিশ ধারা অতিক্রম করে পৌছে যাই স্বৈর শহরে।
যেমন ঘুমের ভেতর ডাহুক পাখি ডেকে ওঠে, তোলপাড় করে নাগরিক কোলাহল 
তোমাকে দেখার পর তেমনি কিছুই ঠিক থাকে না, হয়ে যাই দিনকানা
গ্রেনেড বিস্ফোরিত বন্দরের মতো ভেঙে যায় আমার চারপাশ 
করিমের আঁকা তৈলচিত্রের মতো চেয়ে দেখি তোমার আকাশ।
তোমাকে দেখার পর আসহাবে কাহাফের মতো কেটে যায় সহস্র যুগান্তর 
না, নেই আমার ঘর -সংসার,
বিষপিঁপড়ের রাজত্বের মতো শৃঙ্খলিত তোমাকে দেখার বন্দর। 
আহা্ জীবন কতো সুন্দর, না পাওয়া পুরুষের দৃষ্টিখুনে প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে 
আমার আশা, ভালোবাসা, অপেক্ষেয় লক্ষ রজনী, ক্লান্ত দিবসের সহস্র সকাল
শেষবার দেখার বাসনায় সহস্রবার আত্মহত্যার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া পাগল
প্রেমিকের দৃষ্টিখুন; যেমন মেহেদী পাতার ভিতর লুকিয়ে থাকে অজস্র খুন
ঠিক তেমনি আমি খুনের খনি, পুষ্প দূরে থেকেই মুগ্ধকর, ছুঁলেই নড়বড়
অপ্রিয় আমার সাজানো গোছানো সংসার, সন্তানের মলিন হাসি
কেন জানি আমি প্রেমিকের দৃষ্টিখুনেই ফাঁসি, ভালোবাসা হারানোর রাশি
তোমাকে পেলে আমি অনন্তকাল, হবো নির্বাচিত দাসী।


অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন