জলধি / কবিতা / আইয়ুব আল আমিনের তিনটি কবিতা
Share:
আইয়ুব আল আমিনের তিনটি কবিতা
ভুল

কিছু মানুষ আজন্ম যাপন করে আরেকজনের জীবন

এই যেমন কারো হবার কথা ছিল গাছ

অথচ সে ভুল করে জন্মেছে মানুষ হয়ে।

হলে কি হবে

সে তো আসলে গাছই,

কেউ তার পাতা  ছিঁড়ে নিচ্ছে দুবেলা

নচনচে শাখাটা মুচড়ে দিচ্ছে কেউ কেউ

বুকের মধ্যে শেকড় উপড়ানো ঝড়ের ভয়,

তবুও সামন্য দখিনা বাতাসে পাতায় পাতায় কি অদ্ভুত শিহরণ!

আবার কিছু মানুষ চিরকাল

একটা ভুল জীবন বয়ে বেড়ায়

সেইরকম একজনকে আমি জানি

কথা ছিল সে হবে তুমুল প্রেমিক, জাদুকর

প্রেয়সীর গরল বুকে  জমাবে

মেঘ আর বিজলীর নীল খেলা।

মধুরসে জ্বালবে শামের আগুন

আরও কত  কি!

সেই নাকি শেষমেষ জন্মালো একটা পাথর হয়ে

কুচকুচে নিথর কালো পাথর।

হায়রে প্রেমিক, হায়রে পাষান।

আবার কিছু মানুষ সমস্তটাকাল

একটা মিথ্যা জীবনের ভেলায় এলোমেলো ভাসে,

এই যেমন আমি

কথাই ছিল না হয়তো

কোনোদিন কারো জঠরে জন্মাবো

কোথাও কোনো চিহ্ন থাকবে না আমার-

না ধুলোয় না কাদায়।

অথচ কি প্রচন্ড মিথ্যা করে আজ আমি আছি এইখানে

একজন -মানুষ হয়ে।


মুঠি (সন্ধ্যেবেলার কবিতা)

হাতের মুঠি শক্ত করে জোরে জোরে হাঁটি,

নতুন হেডফোনের হেয়ারপিচ অনভ্যাসে

কানে পিপড়ার মত বিড়বিড় করে।

নবনীতা চৌধুরী খবর পড়ছে....

তার রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া কন্ঠে শুনতে হয়

ক্রমশ দীর্ঘ্য হয়ে ওঠা মৃত্যুর সমাচার।

হাতের মুঠি শক্ত হয় আরও; অজান্তেই

আঙুলগুলো টনটন করে ব্যথায়।

গলির এই মোড়টাতে একদল কুকুর দেখি প্রায়ই

মানুষের ভিড়ে কোনোদিন খেয়াল করিনি

আজ দেখলাম কি সুন্দর চোখ কুকুরেরও,

কত মায়া মায়া করে তাকায়!

খবরে বলছে রোমের দেশে হাসপাতালে

একজন নার্স টানা দশদিন কাজ করে করে পরিশ্রান্ত।

তবু ওর কোনো ক্লান্তি নেই....

ইলিনা নামের সেই সোনালি চুলের

মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে হাঁটি,

আমি তার ঝলমলে চোখ দেখতে পাই।

আরও যতদিন লাগুক সব্বাইকে সুস্থ করে

বাড়ীতে ফিরবে চিবুক বসে যাওয়া হাসিমুখের ইলিনা,

ফিরেই প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরবে,

তার নীল চোখ থেকে টপ টপ করে গড়াবে পবিত্র জল।

কোথাও হয়তো বৃষ্টি হয়েছে

ঠান্ডা বাতাসে গা শিরশির করে।

মুঠি করা হাত পকেটে ঢুকাই

সন্ধ্যাবেলাতেই এত শুনশান এই শহর

কেমন স্বপ্নের মত....

আচ্ছা একজন মানুষ মরলে আমরা যত কষ্ট পাই

একসাথে দুজন মরলে কি তার দ্বিগুণ পাই?

তিনজন মরলে তিনগুণ?

নাকি হাজারজন মরলেও কষ্ট ওই একই?

মিতুর ফোন আসলে খবর থেমে যায়।

ফোন রিসিভ করি

কথা বুঝতে পারিনা,

বুঝতে পারি কান্না

তখন মনে হয়;

কিছু কান্না হাজার মৃত্যুর চেয়েও কষ্টের।

আবছা অন্ধকারে মুঠি করা হাতের দিকে তাকাই

আমি জানি,

মুঠিটা খুললেই জীবনটা উড়ে যাবে আমার এদেশে!

কেউ জানবে না!


বিচার                         

সেজন্য অবশ্যই বিচার হবে আমার।

সর্বোচ্চ দণ্ড।

কাঠের পাটাতনের উপর ঝুলবে নীল হয়ে যাওয়া  আমার অবশ পা।

জল্লাদ শিরোশ্ছেদ হয়নি ভেবে ভুল করে আরেকবার শিরোশ্ছেদ করে

ফজরের নামায পড়বে মসজিদের বাইরেই।

আচ্ছা জল্লাদদের কি মসজিদে ঢুকা বারণ? কে জানে!

অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে কলতলায় গিয়ে তার মনে হবে

কাকটা এভাবে ডকছে কেন আজ!

বাসি সায়া ব্লাউজে কেমন আঁশটে গন্ধ! লাশের?

স্নান না করেই কি মনে করে সে

লোকাল ট্রেনের একটা খালি কামরায় গিয়ে উঠবে

আনমনে জানলার বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে কত কি ভাববে!

আচ্ছা আমাকে এভাবে দেখে কেমন লাগবে তার?

এসব কল্পনা করে করে দিনের পর দিন

আমি অপেক্ষা করবো একটা হিমঘরের ঘরের ড্রয়ারে।

কিন্তু আমি জানি কুসুম আসবে না,

অফিসে ছুটি নেই তার।



অলংকরণঃ আশিকুর রহমান প্লাবন